সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার বাদী রুবেল প্রামাণিককে অপহরণের ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ রেজা পাভেল ও সাধারণ সম্পাদক মামুন শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এর আগে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো কযেজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
মঙ্গলবার (০৪ আগস্ট) বিকেলে রুবেলের বাবা আব্দুল কাদের প্রমাণিক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে, মামলা করতে গেলে বাদী ও ভিকটিমকে থানার ওসির রুমে প্রতিপক্ষের লোকজন মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে ছাত্রলীগের সভাপতি/সম্পাদককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে থানার সামনে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমর্থকরা।
কামারখন্দ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, এনামুল হক বিজয় হত্যা মামলার বাদী রুবেল প্রামাণিককে অপহরণের অভিযোগে তার বাবা আব্দুল কাদের প্রমাণিক বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পরই থানা এলাকা থেকে আসামি পারভেজ রেজা পাভেল ও মামুন সেখকে গ্রেফতার করা হয়। সন্ধ্যায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে নিজ রুমের ভেতরে বাদী ও ভিকটিমকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২ আগস্ট বিজয় হত্যা মামলার বাদী নিহতের বড় ভাই রুবেলকে কামারখন্দ বাজার এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করা হয়। এরপর বিজয় হত্যা মামলা তুলে নিতে এবং নিহত বিজয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ও মেমোরি কার্ডের জন্য চাপ দেয় অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে তার চিৎকারে বেকায়দায় পড়ে অপহরণকারীরা তাকে বগুড়ার মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দেয়। পরে স্থানীয় একটি মসজিদের মুসল্লিরা তাকে অসুস্থ অবস্থায় পায়। সেখান থেকে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
নিহত বিজয়ের ভাই রুবেল প্রমাণিক বলেন, আজ বিকেলে মামলা করার জন্য থানায় যাচ্ছিলাম। বিষয়টি টের পেয়ে পাভেলসহ ৩ জন আমাদের পিছু নেয়। আমরা দ্রুত থানায় ঢুকে ওসি সাহেবের রুমে আশ্রয় নেই। বিষয়টি জানানোর পর ওসি সাহেব থানার ভেতর থেকেই পাভেলকে আটক করে। তাকে আটকের সংবাদ পেয়ে সমর্থকরা থানায় চলে আসে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ওসির রুমের মধ্যেই আমাকে ও বাবাকে মারধর করে এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য থানার গেটের বাইরে ছিলেন ওসি সাহেব। এ সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী থানার বাইরে ও ভেতরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশী নিরাপত্তায় আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
কামারখন্দ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শাহিনুর কবির জানান, সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক থানায় গিয়েছিলাম। থানার বাইরে পাভেলের সমর্থক নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করলেও তারা থানার ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করায় মামুন সেখ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে অপহরণ মামলার প্রধান আসামি।
বিক্ষোভ থামাতে টিয়ারসেল ও শর্টগানের গুলি করা হয় বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেলেও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, জাতীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিমের স্মরণে দোয়া মাহফিলে যোগ দিতে আসার পথে শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও জামতৈল হাজী কোরপ আলী ডিগ্রি কলেজ শাখার সভাপতি এনামুল হক বিজয়কে কুপিয়ে আহত করে প্রতিপক্ষ। ৯ দিন হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে থাকার পর ৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বড় ভাই রুবেল বাদী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের ২ সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে ৭ জুলাই নিহত এনামুল হক বিজয় স্মরণে মিলাদ মাহফিলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষে অন্তত ৪০ জন নেতাকর্মী আহত হন। এ সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্লাপাল্টি ৪টি মামলা হয়েছে। এরই জেরে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে ৮ জুলাই থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় তালাবদ্ধ ও দলের সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের দলীয় কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২০
আরএ