ঢাকা: দলে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরইমধ্যে অনুপ্রবেশকারী নেতাকর্মীর প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি বেশ কিছু দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অপকর্মের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম এসেছে। এদের কারণে দল ও সরকার বারবার সমালোচনার মুখে পড়ছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, অপকর্মে জড়িতরা অনুপ্রবেশকারী। এদের কারণেই বারবার দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সে কারণে এদের ঠেকাতে হবে এবং এদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের নরসিংদীর নেত্রী পাপিয়া অর্থনৈতিক অনিয়মসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর করোনা মহামারির মধ্যে দুর্নীতি অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক দাবিদার রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহান গ্রেপ্তার হন। তাদের কারণে সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয় আওয়ামী লীগকে।
সম্প্রতি এক শিশু অপহরণ ও পাচারের সঙ্গে জড়িত লোপা তালুকদার নামে এক নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন। নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন বলে দাবি করে আসা এই নারীর সাংবাদিক পরিচয়ও আছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ও তাদের সঙ্গে তোলা ছরি সামাজিক মধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
সম্প্রতি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের স্থানীয় দুই শীর্ষ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক নেতাকে বহিষ্কার ও কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, “যারা নানাভাবে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করছে, তারা আওয়ামী লীগ করার জন্য আসছে না। ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে হালুয়া রুটি খাওয়ার জন্য আসছে। আর এরা দলের এক শ্রেণীর নেতার ছত্র ছায়ায় থাকে। ওই নেতার অবস্থান যখন দলে নড়বড়ে হয়ে পড়বে তখন আর অনুপ্রবেশকারী বলেও কিছু থাকবে না। ”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “অনুপ্রবেশকারী ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। চিহ্নিত করে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। “
এদিকে আগামীতে দলের ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের যে কমিটিগুলো গঠিত হবে তার প্রতিটি সতর্কতার সঙ্গে গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো অনুপ্রবেশকারী কমিটিতে কোনো পদে আসতে না পারে। করোনা মহামারি শুরুর দীর্ঘ প্রায় ৬ মাস পর গত ২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় দলের ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে নেতাদের নির্দেশ দেন।
করোনার কারণে প্রায় ছয় মাস পর চলতি মাসে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে। ওই সভায় অনুপ্রবেশের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও করণীয় বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২০
এসকে/এজে