ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘আগামীতে জিততে হলে ওবায়দুল কাদেরকেও সতর্ক হতে হবে’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
‘আগামীতে জিততে হলে ওবায়দুল কাদেরকেও সতর্ক হতে হবে’

নোয়াখালী:  আগামীতে জিততে হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকেও সতর্ক হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তার ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা।

তিনি বলেন, ‘তার (ওবায়দুল কাদের) ওপর আমার ক্ষোভ আছে।

১৯৭৫ সালের পর আমি কবিরহাট থেকে যে রাজনীতি শুরু করেছি, সেখানে আমার হাজার কর্মী আছে। তাদের মুখ থেকে শুনি, তারা কিছুই পায় নাই। তারা এখন আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করে। এখানেও তাকে জিততে হলে আমাদের লাগবে। নেতা (ওবায়দুল কাদের) এলাকায় এলে আমাদের একজন কর্মীও দেখা করতে পারে না। আগামীতে জিততে হলে উনাকেও সতর্ক হতে হবে। এত সহজ নয়। বউ সামলাতে হবে। আর উনার সঙ্গে যারা হাঁটে, তারা কার থেকে মাসোহারা পায়, সে খোঁজ খবর নিতে হবে। ’ 

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের আরও বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের আমার সঙ্গে নেই। নোয়াখালী আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র-শস্ত্র পাঠিয়েছে, ফেনী আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র-শস্ত্র পাঠিয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নেই, পৌরসভা আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নেই। তারপরে ডিসি, এসপি, নির্বাচন কর্মকর্তাও আমার সঙ্গে নেই। আপনারা কি আমার সঙ্গে থাকবেন কিনা? (এসময় উপস্থিত জনগণ তার সঙ্গে আছেন বলে জানান। )’

‘মোবাইল ফোনে যুব মহিলা লীগের পরিচয় দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছে আমাকে। প্রশাসনকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাহলে এ নারীর হাত অনেক শক্তিশালী। না হলে, তারা ব্যবস্থা নেয়নি কেন? আমি সত্য কথা বলতেছি। আমি বলেছি, আমি সত্য কথা বলব। এরা আমার সঙ্গে নেই কেউ। আমার এখানে যারা আসে, তারা চেহারা দেখানোর জন্য আসে। বসুরহাটের এরা, উপজেলার এরা ওবায়দুল কাদেরকে ভয় পায়, একরাম চৌধুরীকে ভয় পায়, নিজাম হাজারীকে ভয় পায়। আসতে যেতে কোনো সরাই (মেরে) দেয় কিনা? বুঝছেন কিনা? এটা হলো মূল ঘটনা। আপনারা থাকলেই যথেষ্ট। আর আমার কর্মীও যথেষ্ট নাই। যাদের দায়িত্ব দিয়েছি, তারা আজ পর্যন্ত চিঠি বিলি করে নাই। কাউন্সিলর ভোট নিয়ে ব্যস্ত। করে আওয়ামী লীগ। আপনার সাধারণ কর্মীরা আমার সঙ্গে থাকবেন কিনা বললে, উপস্থিত সবাই সমস্বরে আছি বলে ওয়াদা করেন। আপনারা থাকলে আমি ভোট করব, আর না হয় বাড়িতে শুয়ে থাকব। ভোট একটা পেলে একটা। আপনারা থাকলে আমরা বের হব, না হয় বের হব না। তিন বার ভোট করেছি। এখন কারো কারো তোষামোদ করতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের তোষামোদ করতে হবে। আমার এগুলোর দরকার নেই। আমি স্পষ্ট কথা বলি। আমি বেইমানের চেহারা একটু দেখব। আমি ওয়াদা রক্ষা করি। এদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। কেন্দ্র থেকে এ পর্যন্ত যারা এগুলো করতেছে, আল্লাহর গজব পড়বে। আমি ইমানদার। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। তোমরা বেইমান, তোমরা মোনাফেক। তোমরা মানুষের সঙ্গে ওয়াদা করলে, তা রাখ না। আমি ওয়াদা রক্ষা করি। গত কয় বছর আমি দায়িত্ব পালন করেছি, করোনার সময় আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। কোনো নেতা ছিল? কোনো দলের কেউ ছিল? এখন আপনারা আমাকে ফেলে দিলে কিছু যায় আসে না,’ যোগ করেন তিনি।

রোববার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়ার এক নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।  

আবদুল কাদের আরও বলেন, ‘আমি আমেরিকা গিয়েছি চিকিৎসার জন্য। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাই। দুইটা টিউমার ধরা পড়েছে। একটা বাংলাদেশে পাওয়া গেছে আর একটা আমেরিকায়। সে টিউমারটি খারাপ ছিল। আমি মনে করেছিলাম আমার জীবনের অবসান এখানেই হবে। আমার আর আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে না। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি, আমার মা-বাবার দোয়া আছে, আপনাদের দোয়া ও আশির্বাদে আমি সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বাংলাদেশে ফিরে বিমানবন্দরে এসে ঘোষণা দিয়েছি, আমার সেখানকার অনুভূতিতে অনেক আঘাত লেগেছে। যখন ২৪ দিন ঘরে শোয়া ছিলাম, করোনা। বাইরে বের হতে পারিনি। এ ২৪ দিনে আমার অনুভূতিতে বাংলাদেশের রাজনীতি, কোম্পানীগঞ্জের রাজনীতি, নোয়াখালীর রাজনীতি, ফেনীর রাজনীতি এগুলো আমার অনুভূতিতে খুব আঘাত করেছে। ’ 

‘কেন রাজনীতি করি? আমরা কি করেছি? আমরা কোথায় যাচ্ছি? এজন্য আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। অন্যায়, অনিয়ম, অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলব। আমি নির্বাচনকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে নিয়েছি। এটা হলো সত্য। নির্বাচন আমার কাছে মূখ্য নয়। যেভাবে চলছে, এটা চলতে দেওয়া যায় না। কষ্ট লাগে, আমরা ছোটখাট নেতা। কেন্দ্রীয় নেতা, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাড়ি গোপালগঞ্জ, আপনার সেখানে ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগ, সেখান থেকে তিনি এমপি হয়েছেন। আগে মন্ত্রী ছিলেন, এখন নাই। বুঝেন নাই? এখন নাই কেন? ভালো মানুষ, এজন্য মন্ত্রীত্ব নাই। আমি আর বললাম না, বললে বিপদ,’ বলেন আবদুল কাদের।  
 
তিনি বলেন, ‘এখন আমারে একটা জায়গায় ঠেকায়। সেটা হলো ওবায়দুল কাদের সাহেব অসুস্থ। আমারে আর কোথায়ও ঠেকাতে পারে না। এটা বললে আমি একটু দুর্বল হব। আমি অসুস্থ, আমি মরে যাব। এটা বললে আমি দুর্বল হব। দুর্বলতা এক জায়গায়। তারপরও তার বোঝা উচিত উনি জাতীয় নেতা। আওয়ামী লীগের দুই বারের সাধারণ সম্পাদক। উনার বুঝা উচিত। এ লোক আমাকে পাগল বলে। আমি কি পাগল, উন্মাদ? আমি যখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, নোয়াখালী, ফেনীর অপরাজনীতির প্রতিবাদ করি, ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, আমি আমার এলাকার মানুষের ন্যায্য অধিকার, গ্যাসের অধিকারের জন্য কথা বলি, আমার এলাকার যেখানে গ্যাস পাওয়া গেছে, সেটার নাম হচ্ছে শাহজাদপুর, হাবিবপুর আজ সেখানে সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র লেখা হয়, প্রতিবাদ করি। আমি যখন বলি, ওবায়দুল কাদের সাহেব ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছেন, সে চাকরি কোথায়? আমি যখন প্রতিবাদ করি, তখন বলে আমি নাকি পাগল, আমি উন্মাদ। শুধু এটুকু। আরেকজন নেতা বলেন, দায়িত্বশীলতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে নাকি আমার। ভালো, থাকতে পারে, আমার বয়স কম। আপনি জাতীয় নেতা। আমি ৪৭ বছর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। একদিন কি অন্য দল করেছি। কোনো দালালি করিনি। দায়িত্বশীলতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে আপনি বলেন, হানিফ সাহেব, মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেব যুগ্ম সম্পাদক, আমাদের দলের নেতা, আপনাকে শ্রদ্ধা করি। দায়িত্বশীল ব্যক্তি। আপনার কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙছে, আপনি দায়িত্বশীল লোক? দায়িত্বশীলতার কি পরিচয় আপনি দিয়েছেন? আপনি হলেন রাজনীতিবিদ। নজরুল ইসলাম বাবু। আমার সঙ্গে পরিচয় আছে। আমার জুনিয়র। বাবু। উনি টকশোতে বলেন, আমি নাকি জামায়াত-বিএনপির ভোট পাওয়ার জন্য, আমার অবস্থা খারাপ, এখানে দলের ভিতর দুই ভাগ। আমি অপশক্তি দূর করেছি। আল্লাহ আপনাকে দিয়েছেন, আমাদের দেননি। আমাদের দেবে কোত্থেকে? ওবায়দুল কাদের আমাদের এগুতে দেননি। ঢাকায় ভর্তি হওয়ার জন্য গেছি, বলছেন, চট্টগ্রামে ভর্তি হওয়ার জন্য। ঢাকায় রাজনীতি না করলে, কোনো বড় নেতা হওয়া যায় নাকি? আমরা এগুবো কোত্থেকে?’ 
           
সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্সকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, আপনারা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নুরা পাগলার সঙ্গে বের হয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা করেছেন। আহারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। আহারে বাম দল। এটা আপনাদের রাজনীতি। আপনারা হলেন সাইনবোর্ড সর্বস্ব দল। সারা বাংলাদেশ খুঁজে এখানে যত লোক আছে, তত লোক হবে না। ’
 
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলেছি, বৃহত্তর নোয়াখালীতে ২০০৮ সালে পেয়েছে দুই আসন। তখন সারাদেশে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার। ভোট চুরি করে জয় হয়নি। ফেয়ার ভোটে জয় পেয়েছে। একরাম চৌধুরীর নেতৃত্বে নাকি বিএনপির দুর্গ ভাঙছে? কোথায় ভাঙছে? সে জিতেছে মেজর মান্নান দাঁড়ানোর কারণে। না হলে এক আসন পেত, ওবায়দুল কাদেরের আসন। মেজর মান্নান প্রার্থী হওয়ার কারণে নিজাম হাজারী সাহেব নাকি ফেনীতে বিএনপির দুর্গ ভাঙছেন। কতটা দুর্গ ভাঙছেন, সেটি আমি ভালো করে জানি। এ কথাগুলো এজন্য বলতেছি, যাতে নেত্রী এখন থেকে সজাগ হন। এখনো তিন বছর সময় আছে। এদের লুটপাটের ইতিহাস, এদের অনিয়মের ইতিহাস এগুলো আমাকে বলতে হবে। কিসের দূর্গ ভাঙছে? আমি দরজা খুঁজে পাবে না বলেছি। ব্যতিক্রম হলে, জিহবা কেটে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাব। হিজরত করব। সুষ্ঠু ভোট হলে নোয়াখালীর এমপি একরামুল করিম চৌধুরী, ফেনীর এমপি নিজাম হাজারী যদি জামানত ফিরে পান, তাহলে হিজরত করব। আর আমাদের নেতা (ওবায়দুল কাদের) জিতবেন। কি জন্য? উন্নয়নের জন্য, সততার জন্য। ’
           
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ অতি উৎসাহী প্রশাসনের কিছু লোকের কাছে শেখ হাসিনা চেয়েছেন ফল, তারা এনে দিয়েছে গাছ। ভোট এখানে সুষ্ঠু হবে। ’ 

জেলা প্রশাসককে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, ‘আপনার মুখে এমপি একরামুল করিম চৌধুরী নামযুক্ত মাস্ক কীভাবে আপনি পরেন? আপনিতো নিরপেক্ষ নন। যদি কোম্পানীগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র হয়, কোনো মায়ের বুক খালি হয়, এর সব দায় ডিসি, এসপি, নির্বাচন কর্মকর্তাকে নিতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।