ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ভাগাভাগির অভিযোগ

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২১
ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ভাগাভাগির অভিযোগ

ঢাকা: বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠন চলছে। এরই মধ্যে এক হাজারের বেশি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এসব কমিটি গঠনে পক্ষপাতিত্ব আর ভাগাভাগি করার অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, শিক্ষা-ঐক্য-প্রগতি এ তিন মূলনীতিকে ধারণ করে ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গঠন করেছিলেন। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক হন ইকবাল হোসেন শ্যামল।

দুই পদে ভোট হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির দায়িত্ব পড়ে ওই দুই নেতার ওপর। ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটির ঘোষণা দেন এ দুই নেতা। এরপর শুরু হয় বিভিন্ন স্তরের কমিটি গঠন। এরই মধ্যে অভিযোগ আসতে থাকে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। কমিটি গঠন নিয়ে আর্থিক লেনদেন পক্ষপাতিত্ব আর ভাগাভাগির অভিযোগ ওঠে।  

হাই কমান্ডের সুপারিশ রয়েছে এমন অজুহাতে অযোগ্য, অছাত্র, বিবাহিত, চাকরিজীবী, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।  

ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানান, যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে সংগঠনের অভিভাবক তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব তৈরি করতে চেয়েছেন, তা এখন ব্যর্থতায় পরিণত হতে যাচ্ছে। সাংগঠনিক টিমের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। আবার কিছু জেলায় বিএনপির স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে ছাত্রদলের সাংগঠনিক টিম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদলকে শক্তিশালী করতে তৃণমূল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান। সে অনুযায়ী থানা, পৌরসভা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শাখাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে ১১টি টিম গঠন করা হয়। এসব টিমের মাধ্যমে এই মধ্যে এক হাজারের অধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম টিমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। ওই টিমের প্রধান সহ-সভাপতি মুসাব্বির সফি। তার সঙ্গে আছেন সহসভাপতি পাভেল শিকদার, যুগ্ম-সম্পাদক এবিএম মাহমুদ আলম সরদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন নিলয়, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সাব্বির।

লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ জেলার রামগতি ও কমলনগর নিয়ে গঠিত প্রয়াত ছাত্রনেতা শফিউল বারী বাবুর আসন। তার আসনে বাবুর অনুসারী যারা, তাদের পরিকল্পিতভাবে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সিলেট, চট্টগ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, নেত্রকোনা, খুলনা জেলাসহ বেশ কয়েকটি জেলার থানা কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এসব থানায় নির্যাতিতদের বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আতাতকারীদের পদায়ন করা হয়েছে।
 
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নেতারা জানান, জেলার বন্দর থানায় প্রস্তাবিত সদস্য সচিব সাকিব মো. রাইয়ানের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের পছন্দের আসিফ মকবুলকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। তিনি কখনও ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এর প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদল ঝাড়ু মিছিল করেছে। ফতুল্লা থানা কমিটি নিয়ে বাণিজ্য করায় গত ৯ জানুয়ারি নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে পদ বঞ্চিতরা। তাদের অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি মশিউর রহমান রনি কমিটি বাণিজ্য করেছেন।   

সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে পটুয়াখালীর গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলার কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে। ছাত্রদলের সাবেক নেতা হাসান মামুনের একক ক্ষমতাবলে এ ধরনের বিতর্কিত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন।

ওই জেলার ছাত্রদল নেতারা জানান, অভিযোগ জমার পর তারেক রহমান একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে অদৃশ্য কারণে এখনও সেই কমিটি গঠন করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটি গঠনে গড়িমসি করছেন।  

যদিও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এরই মধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

জানা যায়, ওই দুই উপজেলা কমিটি গঠনে বিবাহিতদের অগ্রাধিকার দিয়ে অছাত্র আর আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের পুরষ্কৃত করা হয়েছে। বিগত দিনে নির্যাতিতদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও ঝাড়ু মিছিল করেছেন বঞ্চিতরা।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, গলাচিপা উপজেলা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক এম দুর্জয় রুবেলকে স্থানীয় ছাত্রনেতারা যোগ্য মনে করছেন না। ওই কমিটির সদস্য সচিব সাব্বির হোসেন প্রীতম বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে গ্রেফতার হয়ে চার মাস কারাভোগ করেন। তিনি পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছেন। প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন নারী কেলেঙ্কারি ও মোবাইল চুরির সঙ্গে জড়িত। যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম বর্তমানে ইউরো ফার্মায় বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী জিলানী বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত। যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান রাকিব চাকরিজীবী। রাসেল মৃধা, মো. রুবেল বিবাহিত। এছাড়া ওই কমিটির অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। যা লিখিতভাবে হাই কমান্ডকে জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বাংলানিউজকে বলেন, সারাদেশে এক হাজারের মতো কমিটি হয়েছে। দুই/এক জায়গার অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। এসব অভিযোগের পক্ষে শক্তিশালী কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। সে রকম যদি বড় ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। ১০ জন মিলে সংগঠন। সবার চারিত্রিক অবস্থা এক রকম না। ভালোমন্দ মিলিয়েই আমরা।

গলাচিপা-দশমিনার বিষয়ে শ্যামল বলেন, সেখান থেকে যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো খণ্ডন করেই তাদের পদ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মামুনকে দিয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২১
এমএইচ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।