টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের গোপালপুর এবং সখীপুর উপজেলার দুই ছাত্রলীগ নেতাকে শীর্ষ দুই পদে রেখে ছাত্রলীগের জেলা কমিটি গঠন করায় জেলাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
জানা যায়, গত শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। এতে সভাপতি করা হয় গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহানুর রহমান সোহানকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈল ইউনিয়নের গোহাইল বাড়ি গ্রামের মো. ইলিয়াস হাসানকে।
বিগত সময়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা নিয়ে শহরে আনন্দ মিছিলসহ মিষ্টি বিতরণ থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। কিন্তু এবারের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। নতুন কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মী ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দিতে চাইছেন।
তারা মনে করছেন, শহরে অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে যারা কোনো দিন জেলা ছাত্রলীগের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন না, তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বের একটা মানদণ্ড ছিল। আন্দোলন, সংগ্রামসহ সব কিছুতেই ছাত্রলীগের ভূমিকা অপরিসীম। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রাণের এ সংগঠনকে আজ এ কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এমন নেতৃত্বের কারণে প্রকৃত ও মেধাবি শিক্ষার্থীরা আর কখনও ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে আগ্রহ দেখাবে না। এমন কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগ কলঙ্কিত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৯ মে গঠিত ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছিল মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলকে। আর যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন মো. তানভীরুল ইসলাম হিমেল, রনি আহম্মেদ, মো. শফিউল আলম মুকুল, মো. রাশেদুল হাসান জনি এবং শামীম আল মামুন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সাবেক এক নেতা জানান, সোহানুর রহমান সোহান গোপালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ২০১৭ সালের ১৯ মে গঠিত জেলা কমিটির ১১ নম্বর সদস্য। জেলার রাজনীতিতে সোহানুর একেবারেই নতুন। থাকেন গোপালপুরে। এছাড়া তিনি জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয় চেনেন কিনা, এ নিয়েও তার সন্দেহ রয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ইলিয়াস হাসানকে। তিনি তো থাকেন সরকারি সা’দত কলেজের মেসে। তিনি ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বিলুপ্ত জেলা কমিটির ২৯ নম্বর সদস্য ছিলেন। তাদের দু’জনকে জেলা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই তিনি ঠিক করেছেন ওই দু’জনের নেতৃত্বে থাকার চেয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দেবেন।
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ রৌফ বাংলানিউজকে জানান, জেলা কমিটি যাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে তা কোনোভাবেই সঠিক হয়নি। সংগঠনে অনেক ত্যাগী নেতা রয়েছে তাদের এখনো বয়স আছে ছাত্রলীগ করার। কিন্তু এভাবে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুইজনকে দুই উপজেলা থেকে এনে কমিটিতে বড় পদে দায়িত্ব দেওয়া মানে জেলার ছাত্রলীগতে ধ্বংস করে দেওয়া। তবে যে কোন এক পদে শহরের একজন ত্যাগী নেতা দেখে দায়িত্ব দিলে ভালো হতো। এভাবে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠন করায় এখন আর ছাত্রনেতারা রাজনীতিতে আসতে চাইবে না।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফারুক হোসেন মানিক বাংলানিউজকে জানান, কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো বোঝেন এবং জানেন। তারা যে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন, এজন্য অভিনন্দন জানাই। তবে নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের পদটি শহর থেকে কয়েকজন ত্যাগী নেতাদের মধ্য থেকে বাছাই করে দিলে ভালো হতো।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম সিরাজুল হক আলমগীর বাংলানিউজকে জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে তারা যা ভালো বুঝেছেন, তাই করেছেন। তিনি এ নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
এসআই