রাজশাহী: রাজশাহী মহানগর বিএনপির নবঘোষিত কমিটির নেতারা নিষ্ক্রিয় এবং বিএনপি বিমুখ। এই কমিটি বাতিল করা না হলে গণপদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন মহানগর বিএনপির নেতারা।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা বিএনপি অফিসে মহানগরের মূল চার থানা কমিটির উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, নতুন কমিটিতে হেভিওয়েট বা দলের পরিচিত মুখের সবাই বাদ পড়েছেন! আর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়দেরই স্থান হয়েছে কমিটিতে।
নতুন আহ্বায়ক আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন নেতারা। দলটির সিনিয়র নেতারা বলছেন, দল ও আন্দোলনের কথা চিন্তা করে কেন্দ্র এটি বিবেচনা করবে।
দীর্ঘ সময় যারা বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন, এমন পরিচিত মুখের সবাই বাদ পড়েছেন। রাজপথের আন্দোলনে সামনের সারির নেতাদের ছাড়াই কমিটি করা হয়েছে মহানগর বিএনপির। আর এতেই প্রকাশ্যে এসেছে ক্ষোভ। রাজশাহীকে বিএনপির ঘাঁটি বলা হলেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সুবিধা করতে পারেনি। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার হয়নি। এরপর এমন কমিটি দলটির সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভাটা ফেলবে বলে মনে করেন নেতারা।
মহানগর বিএনপির প্রাণ বলে বিবেচিত চার থানা কমিটিই প্রকাশ্যে এসে চলমান ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সভাপতি মো. সাইদুর রহমান পিন্টু বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর হঠাৎ গঠিত হওয়া রাজশাহী মহানগর বিএনপির বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটির তথাকথিত নেতৃবৃন্দের বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে এসেছি। আমাদের দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার যখন দিনদিন অবনতি হচ্ছে ঠিক তখনই রাজশাহী মহানগর বিএনপির ৯ সদস্য বিশিষ্ট অচল কমিটি গঠিত হলো কর্মী বিচ্ছিন্ন, দীর্ঘদিন কর্মসূচি বিমুখ, আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে।
তারা বলেন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশাকে। অথচ তার বিগত ২২ বছর বিএনপির কোনো কর্মসূচির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ১/১১ পরবর্তীতে আওয়ামী দুঃশাসন বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে রাজশাহীতে শত শত নেতাকর্মী ডজন ডজন মামলার আসামি হলেও রাজশাহী মহানগর বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়কের নামে কোনো মামলা হয়নি। কারণ তিনি রাজনীতি করতেন না, ২০১৩ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের আন্দোলন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে হরতাল, অবরোধ কোনো কর্মসূচিতেই তিনি ছিলেন না। ২০১৮ সালের বর্তমান অবৈধ সরকার কর্তৃক বিএনপি চেয়ারপার্সনকে কারাবন্দি করা হলে তার মুক্তির দাবিতে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে তাকে কখনোই দেখা যায়নি।
সদ্য ঘোষিত রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির দুই নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে থাকা অবস্থায় তাকে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে পদায়ন করা হয়েছে, যা এক নেতার এক পদ নীতিপরিপন্থী। আহ্বায়কের মতো তার বিরুদ্ধে কোনো হামলা-মামলার নজির নেই ও দলীয় কর্মসূচিতে দুই যুগের অধিক সময় কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সংসবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, নবগঠিত কমিটির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুন একজন আওয়ামী লীগের এজেন্ট। বিগত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরাসরি তার নিজ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকার পক্ষে এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী, রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিনের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাসহ সব ধরনের কার্যকলাপ নিজস্ব দলবল সহকারে পরিচালনা করেন।
এভাবে নতুন কমিটির প্রায় প্রত্যেকের কর্মকাণ্ডের বিশদ তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি বাতিল না হলে গণপদত্যাগের ঘোষণাও দেন রাজশাহী মহানগর কমিটির নেতারা।
নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ডাকা এই জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে মহানগর বিএনপির আওতাধীন সব থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২১
এসএস/এমজেএফ