ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

হাসিনার পতন সময়ের ব্যাপার: গয়েশ্বর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
হাসিনার পতন সময়ের ব্যাপার: গয়েশ্বর সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, মাঝে-মধ্যে একদিন সমাবেশে অংশগ্রহণ করলেই সব দায়দায়িত্ব পালন হয় না। যার যার এলাকা থেকে আন্দোলন করতে হবে।

আন্দোলনের বিকল্প নেই। বিএনপি কখনও পরাজিত হয়নি, হবেও না। শেখ হাসিনার পতন অবশ্যম্ভাবী, সময়ের ব্যাপার।

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার দাবিতে ঢাকা জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, আপনারা যতটা সবল মনে করেন শেখ হাসিনা তত সবল না। আর পুলিশ লম্ফজম্ফ যতই করুক। সময়মতো কিন্তু পুলিশ কেটে পড়বে। কারণ অতীতে দেখা গেছে কোনো পুলিশই কোনো সরকারকে শেষ সময় রক্ষা করতে আসে না। এই পুলিশও কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে যাবে না, আপনাদের পাশেই থাকবে।  

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কখনও খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার সুযোগ দেবে না। বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে মৃত্যুর সংবাদ না পাওয়া পর্যন্ত তিনি অস্থিরভাবে অপেক্ষা করছেন। তাহলে বাধা কে? শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা যদি বাধা হয়ে থাকে তাহলে বাধাটাতো আগে সরানো দরকার। তাহলেই তো খালেদা জিয়া মুক্ত এবং তার পছন্দমাফিক চিকিৎসা নিতে পারবেন। সারাদেশ ঘুরলাম। রাস্তাঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে মানুষের চোখে মুখের ভাষা পাড়া-মহল্লায় সব জায়গায় একটি আওয়াজ খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং চিকিৎসা দেওয়া উচিত। এমনকি আওয়ামী লীগেরও শতকরা ৯০ জন লোক শেখ হাসিনার এই বাড়াবাড়ি পছন্দ করছে না। কারণ আল্লাহ হায়াত দিছে বেঁচে থাকুক। ভবিষ্যতে তাদেরওতো এই দেশে থাকতে হবে। তারপরও খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না।

গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, আপনাদের সামনে হাসতে হাসতে আমাদের নেত্রী গেলো কারাগারে। কারাগার থেকে ফেরত এলো হুইল চেয়ারে বসে মাঝখানে সরকার কি কারিগরি করছে? আমরা যখন জেলে যাই জেল কর্তৃপক্ষ কখনও কখনও কানে কানে বলে স্যার আমরা যত ভালো খাবারই দেই, এটাতো খাবেন না। অর্থাৎ জেল খানায় স্লো পয়জনিং করার ব্যবস্থাটা ব্রিটিশ আমল থেকে আছে। আমাদের মহাসচিব ইতোমধ্যে বলেছেন খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনিং করে নানা রোগে সংক্রমিত করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। কথাটা কিন্তু জনগণ বিশ্বাস করে। জনগণ প্রমাণ করেছে কথাটা ফালতু কথা না। আসলেই খালেদা জিয়ার ওপর পয়জনিং হয়েছে। আর সে কারণেই বিদেশে গেলে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে যদি শনাক্ত হয় সি হ্যাজ বিন পয়জনড। তাহলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তার কি অবস্থা হবে, সেই ভয়ে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার অনুমতি দিচ্ছে না।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বে-আইনি সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রতিদিনই পুঁথি পাঠ করেন। আমাদের আইন শিখায়। কোন আইনের বলে আইনমন্ত্রী তুমি আইনমন্ত্রী হয়েছো? কোন আইনের বলে তোমরা সরকারে আছো? গণতান্ত্রিক নিয়মানুযায়ী পাঁচ বছর অন্তর অন্তর গোপন ব্যালটে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনশ এলাকায় প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়। সেই ৩০০ প্রতিনিধি সরকার গঠন করে তাকে বলা হয় সরকার। অর্থাৎ গভর্নমেন্ট বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, অব দ্য পিপল। আর এই গভর্নমেন্ট হলো ৩০ তারিখেরটা ২৯ তারিখ শেষ। বাই দ্য পুলিশ, ফর দ্য পুলিশ, অব দ্য পুলিশ। পুলিশের কি ক্ষমতা, এ ক্ষমতা দেখার জন্য যুদ্ধ করছি? তারা যেসব কথাবার্তা বলে ওগো মা-বাবার বিয়েও তখন হয়নি, এখন পুলিশ অফিসার হইছে। যুদ্ধটা করেছি আমরা, দেশ স্বাধীন করেছি। নাগরিক অধিকার নিয়ে মাথা উচু করে বাঁচার জন্য পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। বাংলাদেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়ার জন্য নয়। একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র দেখার জন্য। যেখানে ন্যায় বিচার থাকবে। এখন আদালতে গেলেতো অবিচার ছাড়া আর কোনো ন্যায় বিচার নেই। কোন আইনের বলে খালেদা জিয়া জামিন পান না।  

খালেদা জিয়া কোনো অন্যায় করেনি দাবি করে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ওরা বলে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা চাইবে কার কাছে। বাংলাদেশে কে আছে, যার কাছে খালেদা জিয়া ক্ষমা চাইবে। খালেদা জিয়া টাকা চুরি করেছে আত্মসাত করেছে তা রায়ে লেখা নেই, টাকার জায়গায় টাকা আছে। দেশে যদি বিচার থাকে তাহলে প্রধান বিচারপতি সিনহার দুরাবস্থা কেন? তাকে গান পয়েন্টে বিদেশে পাঠানো হলো কেন? বিচারপতির বিচার করে শেখ হাসিনা। আর আমি বলবো, শেখ হাসিনা তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা। সুতরাং মুক্তি নয়, শেখ হাসিনার পতন। সমাবেশে কে জানি বক্তব্যে বললো, যে পাহাড়া দেবে। কেন, ওরা দেশ ছেড়ে পালাবে? কয়দিন আগে মুরাদ নামে একটা পাগল চালান দিছিলো না কানাডায়। ফেরত আইছে না। কেউ জায়গা দিছে? শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সব দুর্নীতিবাজের এই অবস্থা হবে। কোথাও জায়গা পাবে না। কোনো জায়গায় ঠাঁই পাবে না। সেকারণেই হাসিনাকে বলবো, জায়গা যখন বিদেশে পাবেনই না। পালানোর চেষ্টা করারতো দরকার নেই। দেশেই যদি থাকতে চান, খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমা চান। দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান। দেশের মানুষের অধিকার ফেরত দেন। জনগণের সঙ্গে একটু সমঝোতা করেন। যাতে ক্ষমতায় থাকেন বা না থাকেন এই দেশে যেন নিরাপদে শান্তিমতো বসবাস করতে পারেন।

ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, বিএনপি নেতা তমিজ উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন মাস্টার, অপর্না রায়, নিপুন রায় চৌধুরী, এসএম জাহাঙ্গীর, আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
এমএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।