লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের এক ছাত্রলীগ নেত্রীর পৃথক দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। এতে আলোচনা এবং সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এ সময় বাসের যাত্রীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উত্তেজিত আচরণ করেন রিপা। আর ঘটনার শুরু থেকেই তিনি নিজেই ভিডিওটি ধারণ করেন, শেষের দিকে অন্য আরেক জনের মাধ্যমে ভিডিওটি ধারণ করান তিনি।
রিপার বক্তব্য অনুযায়ী, বাসটি আল আরাফাহ এক্সপ্রেস লিমিটেডের। এটি ঢাকা ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ রুটে চলাচল করে। রাত্রিকালীন ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনাটি কবে ঘটেছে- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফাতেমাতুজ জোহরা রিপা জেলার রামগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক। তার বাড়ি পৌরসভার বাঁশঘর এলাকায়। রামগঞ্জের একটি কলেজের ছাত্রী তিনি। বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনা ও সমালোচনার পাত্র হন রিপা।
বিষয়টি জানতে রোববার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে বেশ কয়েকবার তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
রিপার অভিযোগ ছিলো, বাসের এক যাত্রী সরকারের ‘বদনাম’ করেছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়- রিপা নামে ওই যাত্রী তার পাশ্ববর্তী সিটে বসা এক ব্যক্তিকে উত্তেজিত হয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘সবগুলারে গ্রেপ্তার করাব। কতো বড় সাহস সরকারের বদনাম বাসে বসে। এই তোরে একবারে শেষ করে ফেলব! সরকারের বদনাম করস! বাসে বসে সরকারের বদনাম করার সাহস হয় কী করে। ’
‘সরকার কী কইচ্চে তোরে? সম্পূর্ণ ভিডিও আমি কইরে রাখছি। তোরে একবারে শেষ কইরে ফেলব! একবারে হাত-পা ভাঙি দিব আমি। ’
ভিডিওর শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এই বাসটা কুমিল্লা হয়ে ঢাকা যাবে। এটা আল আরাফা বাস। এরা বাসের মধ্যে সরকারের সমালোচনা করছে। আমি বলেছি, তাই আমাকে এক বেটা মারতে উঠেছে। এরা আমার ওপর আক্রমণ করবে, হামলা করবে। এদের সবগুলারে গ্রেফতার করায়ে দিব। সবগুলারে আইনের আওতায় আনব। বাসের লাইট অফ করে দিয়ে হামলা করবে। একটা দুর্ঘটনা ঘটাবে আমার সঙ্গে। আমি যেকোনো সময় হামলার শিকার হবো। এরা সবাই আমারে মেরে ফেলবে। আপনারা আমাকে হেল্প করেন। ’
এদিকে ফেসবুকে রিপার আরেকটি ভিডিও দেখা যাচ্ছে। ঘটনার পরদিন ভিডিওটি প্রচার করেন তিনি।
এ সময় আগের দিনের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা গতকাল বিকেলে আমার লাইভটা দেখেছেন। আমি রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার সময় কিছু লোকজন আমাদের দেশরত্ন শেখ হাসিনার বদনাম বলছিলো খুবই নোংরা ভাষায়। আমি একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে সহ্য করতে পারিনি, আমি প্রতিবাদ করেছি। আমার প্রতিবাদের পরে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। বাসের মধ্যে যারা ছিল- সকলে আমার ধারণা জামায়াত-শিবির, বিএনপি ছিল। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতা পুলিশ পাঠিয়েছেন। পুলিশ ওনাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং ওনারা ক্ষমা চেয়েছেন। আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। লাইভটা ডিলিট করে দেওয়ার জন্য পুলিশ বলেছে, লাইভটা ডিলিট করে দিয়েছি। ’
তিনি বলেন, ‘যেখানেই সরকারের বদনাম হবে, সেখানেই আমি প্রতিবাদ করবো। আমার যা হবার হয়ে যাক। ’
এদিকে বাসে যে ব্যক্তির ওপর রিপা ক্ষিপ্ত হয়েছেন- তারও একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম এবং পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানা না গেলেও তিনি নিজেকে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
ভিডিওতে তিনি বলেন, বাসের ওই নারী নিজেকে ভাইরাল করার উদ্দেশে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।
অন্যদিকে, আগেও বেশ কয়েকবার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রিপা। ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ও তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এ সময় রিপাকে লাঠিহাতে হামলা করতে দেখা যায়। তখন লাঠিহাতে রিপার ছবি ও ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তিনি নিজেও তার ফেসবুক পেজে সেগুলো পোস্ট করেন।
এছাড়া গত বছরের ৬ এপ্রিল রামগঞ্জে শিক্ষকদের একটি সমাবেশের আয়োজিত মঞ্চে বসে পড়েন রিপা। এ সময় তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হলে ফেসবুকে লাইভে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন বেশ আলোচিত এবং সমালোচিত হন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
এনটি