ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

গণঅভ্যুত্থানে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে: সাকি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
গণঅভ্যুত্থানে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে: সাকি ফাইল ছবি

ঢাকা: গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের মানবিক, নাগরিক অধিকার এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে এই সরকারের পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে ‘উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শিক্ষা এবং বাংলাদেশে ভোটাধিকার ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লড়াই’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।  

দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে এ আলোচনায় অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম।

আলোচনায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ এবং সঞ্চালনা করেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ১৯৬৯ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে শ্রমিক ও কৃষকদের উত্থান ঘটেছিল, অন্যদিকে জানুয়ারির ৪ তারিখে সারা দেশে ছাত্রদের সংগ্রামে মানুষ উদ্বেলিত হয়েছিল। জানুয়ারির ২৪ তারিখে এসে ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়ে পরিণতি পায়। এ আন্দোলন শুরু হয়েছিল ৬ ডিসেম্বর ১৯৬৮ এবং সমাপ্তি ধরা যায় ২৫ মার্চ ১৯৬৯ আইয়ুব খানের পতনের ভেতর দিয়ে। এই দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রায় প্রতিদিন এদেশের মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন সারা দেশে। ’৬৯ এর গণ-আন্দোলনের এই অভিজ্ঞতা ’৭১ সালের গণহত্যা প্রতিরোধ করতে সাহস যুগিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে দলের নেতৃত্বে দেশে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, আজ সেই দল দেশি-বিদেশি শক্তির সহায়তায় কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েক করেছে। মানুষের মর্যাদা ও সব ধরনের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গদি রক্ষাকে তারা নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার সাথে মিলিয়ে ফেলছে। নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে তারা দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছেন। তারা দেশকে নানান পরিচয়ে বিভাজিত করছে। ফলে এর সুযোগ নিচ্ছে আধিপত্যকারী বিদেশি শক্তি।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মানবিক, নাগরিক অধিকার এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে এই সরকারের পদত্যাগ করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নাই। এবং গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। একাজে আমাদের উনসত্তরের শিক্ষাই গ্রহণ করতে হবে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৬ দফার ভেতরে মানুষ সোনার বাংলা নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিল। এখন কি আমরা সেরকম স্বপ্ন মানুষের মধ্যে তৈরি করতে পারছি? আমরা সরকারের সমালোচনা করছি, ঠিক আছে; কিন্তু একে বদলে আমরা কি করতে চাই জনগণের আন্দোলনে সেটা স্পষ্ট করাই এখন সবচেয়ে বড় কর্তব্য। উনসত্তর থেকে সেই শিক্ষাই আমাদের নিতে হবে।

সাইফুল হক বলেন, ’৬৯ থেকে ’৭১ বাংলাদেশের সকল দল মত নির্বিশেষ লড়াই করেছেন, জীবন দিয়েছেন। যদিও স্বাধীন দেশে সরকার গঠন করেছে একটি দল। পাকিস্তান রাষ্টের অধীনে নির্বাচন করে তারাই ’৭২ সালে এসে সংবিধান রচনার দায়িত্ব নিয়েছে। এখানে গোড়ায় গলদ হয়েছে, যার ঘানি আজও টানতে হচ্ছে।

সূচনা বক্তব্যে ফিরোজ আহমেদ বলেন, আইয়ুব খান কিংবা তার আগে ইসকেন্দার মির্জার স্বৈরশাসনের সমর্থক ছিল তখনকার সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র। আজকেও আমরা দেখছি বাংলাদেশে নির্বাচনবিহীন একটি দশক পার হয়ে গেল। একটি কায়েমি স্বার্থের আমলাতন্ত্র তাদের লুণ্ঠন ও সুবিধা বজায় রাখার জন্য বেশিরভাগ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। বর্তমান সরকারের মতো আইয়ুব খানও তার স্বৈরতন্ত্র কায়েম রেখেছিল উন্নয়নের ধুয়ো তুলে।

আলোচনা সভার সোমবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উনসত্তরের শহীদদের প্রতি এবং নবকুমার ইনস্টিটিউটে ২৪ জানুয়ারির শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফাসহ অন্যান্য নেতারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।