ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

রাজনীতি

বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: ড. ফরহাদ

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: ড. ফরহাদ ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ

ঢাকা: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেছেন, যারা জাতীয় সরকারের দাবি তুলেছেন সেটা তাদের নিজস্ব মতামত। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও ২০দলীয় জোটের সঙ্গে জাতীয় সরকারের দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

আমরা চাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন।

মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) বিকেলে মতিঝিলে ফরিদুজ্জামান ফরহাদের চেম্বারে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

২০ দলীয় জোটের এই নেতা বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এই সরকারের অধীনে দুটি নির্বাচন হয়েছিল। তাতে ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে আর ২০১৪ সালে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। এখন বাংলাদেশের সব মানুষ বিশ্বাস করে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩দিন হরতাল করে দাবি আদায় করেছিল। কিন্তু এখন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে না। তারা কোর্টের দোহাই দেয়। কিন্তু কোর্ট বলেছিল পর পর দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। তারপর অন্য কিছু হতে পারে। যেহেতু বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেজন্য একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সেটা যে নামেই হোক, সেই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোটে যারা নির্বাচিত হবেন তারাই সরকার গঠন করবেন। আর বিরোধী জোটের দুই-একজন যে জাতীয় সরকার চাচ্ছেন আমি মনে করি সেটা তাদের ব্যক্তিগত মতামত। এটার সঙ্গে ২০দলীয় জোটের কোনো সম্পর্ক নেই।

ড. ফরহাদ বলেন, ২০ দলীয় জোট এখনো আছে, এই জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপি এখনো বলেনি যে ২০ দলীয় জোট ভেঙে গেছে। আমরা ২০ দলীয় জোটে প্রথম থেকে ছিলাম এখনো রয়েছে। তবে জোটের যে বৈঠক হচ্ছে না সেটার ব্যাপারে বিএনপি ভালো বলতে পারবে। তবে মিটিং ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের সব দলের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ আছে এবং কার্যক্রম চলছে। আমরা যখন কোনো কর্মসূচি পালন করি, আন্দোলন করি তখন বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য যারা আছেন তারা আসেন। আবার বিএনপি'র প্রোগ্রামেও আমাদের দাওয়াত দিলে আমরা যাই।

২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন। জামায়াতকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যতক্ষণে বিএনপি না বলবে ততক্ষণ আমরা মনে করি জামায়াত জোটে রয়েছে। জামায়াতও বলেনি যে আমরা ২০ দল ছেড়েছি আবার বিএনপিও বলেনি আমরা জামায়াতকে বাদ দিয়েছি।

২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল অলি আহমদ ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ফরহাদ বলেন, ওনাদের বিষয়টি ওনাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই ভালো হবে। কারণ আমরা ওনাদের দল করি না। আমাদের নিজস্ব একটা পলিসি আছে। কিন্তু জেনারেল ইবরাহিম সাহেবকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তো উনি বলেন যে না আমি জোটে আছি। ২০ দলীয় জোটের অনুষ্ঠানেও তাঁকে দেখা যায়।   অপরদিকে কর্নেল অলি আহমদও এখনো বলেননি যে তিনি জোট ছেড়েছেন।  

সরকারবিরোধী জোটের মধ্যে নিরপেক্ষ এবং জাতীয় সরকার নিয়ে একটি আলোচনা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ জাতীয় সরকারের দাবি তুলেছেন। আবার বিএনপি বলছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? জবাবে তিনি বলেন,  আমাদের দাবি হলো নির্বাচনকালীন একটা সরকার। সেই সরকারকে আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নিরপেক্ষ সরকার যাই বলেন না কেন, সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।

কর্নেল অলি আহমদের বাসায় গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠক করেছেন।  সেই বৈঠকে কর্নেল অলি আহমদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলেছেন, ‘জাতীয় সরকারের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। ’ এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন? উত্তরে তিনি বলেন, না এ বিষয়টি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। তবে পত্র পত্রিকার মাধ্যমে দেখেছি, কর্নেল অলি আহমদ, জেনারেল ইবরাহিম, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আসম আব্দুর রব উনারা জাতীয় সরকার চাচ্ছেন। ’ জাতীয় সরকারের দাবি এই চারজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বিএনপি একটি বড় দল আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হলে বিএনপির নেতৃত্বেই করতে হবে। আমরা বিএনপির নেতৃত্বে আছি, বিএনপির মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রাম করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে এই সরকারের পতন করা হবে। জাতীয় সরকারের দাবি ওনাদের ব্যক্তিগত মত হতে পারে।  

আপনি তো বললেন বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন করবেন, আপনার কি মনে হয় যে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করে সরকারের কাছ থেকে তাদের দাবি আদায় করতে পারবে? জবাবে তিনি বলেন, পারবে না কেন, অবশ্যই পারবে। আওয়ামী লীগ যখন ২১ বছর সরকারের বাইরে ছিল তখন তাদের মিটিং-মিছিলে ৫০ থেকে ১০০ জনের বেশি লোক হতো না।   অপরদিকে বিএনপির বিরুদ্ধে কত মামলা হামলা হয়েছে। কত মানুষ গুম হয়েছে। ৫ লাখ মামলায় ৩৫লাখ লোক আসামি। তারপরও দেখেন বিএনপির সভা সমাবেশে কত লোক হয়। এই যে ২৬শে মার্চের যে সমাবেশ হলো সেখানে কত হাজার হাজার লোক হয়েছে।

বিএনপি সঠিক পথে আছে কিনা জোটের শরীক হিসেবে আপনার কি মনে হয়? জবাবে ড. ফরহাদ বলেন, বিএনপি সঠিক পথেই আছে এবং আন্দোলন করে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে জোট থেকে বলেন বিএনপি থেকে বলেন কোনো লোক কি বের হয়েছে, ২০১৮সালের নির্বাচনের পরে কি বিএনপি থেকে একটা লোক বের হয়েছে? শাখা উপ-শাখা যদি বের হয়ে যায় তাতে জোটের কোনো ক্ষতি হবে না।

‘তত্ত্বাবধায়ক অথবা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না’তাদের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, যে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। সেজন্যই বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?

ড. ফরহাদ বলেন,  তাহলে সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয় না কেন তারা কেন দিনের ভোট রাতে কাটে। তাদের এত ভয় কেন যদি তারেক রহমান-খালেদা জিয়া নির্বাচন না করতে পারেন তাহলে একটা ফেয়ার ইলেকশন দিয়ে দেখুক। রাত ১২টায় ভোট কেটে কেন সরকারে বসে আছে!

আপনাদের জোট নির্বাচনে বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? এর জবাবে তিনি বলেন, তখন সময়ই বলে দেবে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেটা তখন দেখা যাবে।

তাহলে নির্বাচনের আগে আপনারা কাকে সামনে নিয়ে মাঠে নামবেন ড. ফরহাদ বলেন, কেন বিএনপির নেতৃত্ব চলছে না আমাদের জোটের নেতাতো আছেন, তাকে নিয়েইতো এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া আছেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান আছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম  আলমগীর আছেন তাদের নেতৃত্বেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সুতরাং জোটের নেতা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তারা খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে রেখেছে। এরকম রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা পৃথিবীতে হাজার হাজার হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫১ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২২
এমএইচ/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।