ঢাকা: বিগত প্রায় সব সরকারের আমলেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন ও সেবার মানের কি উন্নয়ন হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর। তবে দাম বাড়ানোর বেলায় বর্তমান সরকারের ধারে কাছে কেউ নেই।
গত সাড়ে ৩ বছরে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫বার, খুচরা দাম ৬বার, জ্বালানি তেলের দাম ৬দফা ও সিএনজির দাম দু’দফা বাড়ানো হয়েছে। আরো এক দফা দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ। সে মোতাবেক জুলাই মাসেই বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, সিএনজি ও গ্যাসের দাম ।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা হয়েছে। আর তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে। ৬ দফায় খুচরা জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৬ ভাগ। আর এবার এক দফায়ই ৩০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
জুলাই মাসে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ।
সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ ৫ম দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মোট দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬দশমিক ৩৩ শতাংশ। গড়ে ইউনিট প্রতি দুই টাকা ৬৩ পয়সা থেকে বেড়ে বর্তমান মূল্য দাঁড়িয়েছে চার টাকা দুই পয়সা। গ্রাহক পর্যায়ে ৬ দফায় মূল্য বেড়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ টাকা ২৩ পয়সা।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুধু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৫৭ ভাগ বাড়ায়। এরপর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকদের গড়ে ৬দশমিক ৩২ টাকা ভাগ দাম বাড়ানো হয়।
এরপর ১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ায়। এরপর একই বছরের ডিসেম্বর মাসে পাইকারি দর ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক ০১ শতাংশ সর্শেষ ১ মার্ ৬দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
বতর্মান সরকার সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ২৯ ডিসেম্বর। বর্তমানে ডিজেল ও কেরোসিন লিটারপ্রতি ৬১ টাকা, অকটেন ৯৪ টাকা, পেট্রোল ৯১ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রথম দফায় গত ৬ মে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। ওই সময় সব ধরনের জ্বালানি তেলে লিটারে দুই টাকা বাড়ানো হয়। এর ফলে ডিজেল ও কেরোসিন ৪৪ থেকে বেড়ে হয় ৪৬ টাকা। অকটেন ৭৭ থেকে বেড়ে ৭৯ টাকা ও পেট্রল ৭৪ থেকে বেড়ে হয় ৭৬ টাকা।
দ্বিতীয় দফায় ১৯ সেপ্টেম্বর সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়। ওই সময় ৪৬ টাকার কোরোসিন ও ডিজেল বেড়ে হয় ৫১ টাকা। আর ৭৯ টাকার অকটেন ৮৪ টাকা এবং ৭৬ টাকার পেট্রল হয় ৮১ টাকা।
এরপর ১১ নভেম্বর আবারো চার শ্রেণীর জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা বাড়ানো হয়। এ সুবাদে ৫১ টাকার কেরোসিন ও ডিজেল হয় ৫৬, ৮৪ টাকার অকটেন হয় ৮৯ ও ৮১ টাকার পেট্রল হয় ৮৬ টাকা।
ফার্নেস অয়েল
২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি ফার্নেস অয়েলের দাম লিটারে ৯ টাকা বাড়িয়ে ২৬ টাকা থেকে ৩৫ টাকা করা হয়। মাত্র দুই মাসের মাথায় আরেক দফা দাম বাড়ানো হয় ১১ এপ্রিল। সেবার লিটারে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দাম রাখা হয় ৪০ টাকা।
তৃতীয় দফা দাম বাড়ানো হয় ৬ মে। সেবার লিটারে দুই টাকা বাড়িয়ে ৪২ টাকা করা হয়। চতুর্থ দফা ১৯ সেপ্টেম্বরে লিটারে আট টাকা বাড়িয়ে ৪২ থেকে এক লাফে ৫০ টাকা করা হয়। ১৯ নভেম্বর ফের লিটারে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা করা হয়। সর্শেষ ২৯ ডিসেম্বর আরো ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়।
সিএনজি
সিএনজির দাম দুই দফায় ৭৯ দশমিক ১০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। প্রথমে ২০১২ সালের ১২ মে প্রতি ঘনমিটারে আট টাকা ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ২৫ টাকায় উন্নীত করা হয়।
দ্বিতীয় দফায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রতি ঘনমিটারে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করা হয়।
এবার সিএনজির দাম প্রতি ঘনমিটার ১০ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই দফায় আবাসিক ছাড়া অন্যান্য সব ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামছুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ``এইভাবে দাম বৃদ্ধির পরিণতি মোটেই শুভ হতে পারে না। সরকারের অনেক বিকল্প ছিলো কিন্তু তারা সে পথে যায়নি। বিশেষ করে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়েও পরিস্থিতি মোকাবেল করা সম্ভব ছিলো। এর জন্য তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না বাড়িয়ে পুরাতন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সংস্কার করাটাই উত্তম হতো। ``
পিডিবির চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১২
ইএস/ সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর[email protected]