ঢাকা: বিদ্যুতের অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয় রকমের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বর্তমান সররকার সাড়ে তিন বছরে ৬ দফায় গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ।
রোববার গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর জন্য ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ড্রিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব দিয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দু’একদিনের মধ্যেই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে।
বিইআরসি সূত্র জানায়, গত ৬ জুন বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫০ ভাগ বাড়ানোর জন্য পিডিবি একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। পাইকারি দাম বাড়ানোর পর বিতরণ কোম্পানি লোকসান করে এ জন্য একই সঙ্গে বিইআরসি পাইকারি এবং খুচরা দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। বিইআরসি থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিতে বলা হয়।
ডিপিডিসি সচিব মরণ কুমার চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি প্রস্তাব রোববার বিকেলে বিইআরসিতে জমা দিয়েছে। প্রস্তাবে খুচরা বিদ্যুতের দাম ৫৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে ডিপিডিসি উল্লেখ করেছে, গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যথাক্রমে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয় ১৯ দশমিক ৯৫ এবং ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। কিন্তু ওই সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) দাম বাড়ানো হয়েছে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৭৬ ও ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এছাড়া পাইকারি দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানো হলে ৫৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাড়ানো প্রয়োজন পড়বে। আর তা না হলে সংস্থা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।
ডিপিডিসি তাদের এই বর্ধিত মূল্য জুলাই মাস থেকেই কার্যকর করার প্রস্তাব করেছে।
ওয়েস্টজোন তাদের প্রস্তাবে বিদ্যুতের দাম ৫৬ দশমিক ৮৬ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কোম্পানিটির সচিব রবীন্দ্রনাথ দত্ত জানিয়েছেন, রোববার খুলনা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বরাবরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
পিডিবি সূত্র জানায়, দু’একদিনের মধ্যে তারা গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা দেবেন। তারা ৫৫ থেকে ৫৬ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান।
আরইবি এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, তাদের প্রস্তাব চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই তা বিইআরসিতে জমা দেবেন।
আরইবির ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ বিক্রিতে ৪২ পয়সা লোকসান করছে। লোকসানের ৪২ পয়সা এবং পাইকারি দাম যে পরিমান বৃদ্ধি পাবে, তার সমপরিমান বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করতে চায় সংস্থটি।
সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন ধরে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। অতীতে কোনো দিন সমন্বিত বৈঠক না হলেও এবার বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি এক সঙ্গে বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে পিডিবির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা বিইআরসিতে আরেকটি সংশোধিত দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে। এতে ৫৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব থাকছে বলে জানা গেছে।
পাইকারি দামের ৭০ শতাংশ প্রভাব পড়ে গ্রাহক পর্যায়ে। সে কারণে পিডিবির দেওয়া ৫০ শতাংশ পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপরীতে খুচরা দাম সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার কথা।
কিন্তু পাইকারি প্রস্তাবের চেয়েও বেশি প্রস্তাব দেওয়ার কারণ সম্পর্কে ডিপিডিসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পিডিবি তাদের প্রস্তাব সংশোধন করে ৫৫ শতাংশ করতে যাচ্ছে। আর সে কারণেই সংস্থাগুলোকেও এইভাবে প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে।
পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের পর বিইআরসি সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ৫০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এই পরিমাণ দাম বাড়ালে সংস্থাগুলো লোকসানে পড়বে। তাই খুচরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও জমা দিতে বলা হয়েছে।
পিডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকার কয়েক দফায় দাম বাড়িয়ে সমালোচনার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া সমালোচকারও বারে বারে সুযোগ পান। সরকার দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে সেই সুযোগ দিতে চান না। এ ছাড়া নির্বাচন এগিয়ে আসায় এর পরে আর সরকার দাম বাড়িয়ে ঝুঁকি নিতে চাইবে না। সরকার মনে করছে, এতো আগে দাম বাড়ালে ভোট আসতে আসতে জনগণ ভুলে যাবে।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুধু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ( আরইবি) গ্রাহকদের ৬ দশমিক ৫৭ ভাগ দাম বাড়ায়। এরপর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থা গ্রাহক পর্যায়ে বিদুতের দাম গড়ে ৬ দশমিক ৩২ ভাগ বাড়ায়।
এরপর ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ানো হয়। এরপর একই বছরের ডিসেম্বর মাসে পাইকারি দর ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক ০১ শতাংশ সর্শেষ ১ মার্চে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।
সর্বশেষ ২৯ মার্চ দাম বাড়ানোর ফলে বর্তমানে বিদ্যুতের পাইকারি গড় দর রয়েছে ৪ টাকা ০২ পয়সা ও গ্রাহক পর্যায়ে ইউনিট প্রতি গড় দর রয়েছে ৫ দশমিক ৩২ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর