ঢাকা: ‘রমজানে ৩০ মিনিটের বেশি লোডশেডিং হবে না’ বলে জ্বালানি উপদেষ্টার দেওয়া কথা অনেকটাই যেন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
রমজান শুরু হওয়ার আগে বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে এক আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এ প্রতিশ্রুত জানিয়েছিলেন।
এর অর্থ সরকার তথা সরকারের বিভিন্ন মহল চাইলে বিদ্যুৎ সহ যে কোনো সমস্যা মোকাবেলা কঠিন কাজ নয়।
লালবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী গৃহিণী নাজরিন আক্তার বাংলানিউজকে আফসোসের কণ্ঠে বলেন, এতো কষ্ট করে টাকা জমিয়ে আইপিএস না কিনলেও পারতাম। আইপিএস কিনে দেখি এখন আর তেমন কোনো লোডশেডিং হচ্ছে না।
রমযানে অন্যান্য বছর সেহরি ও ইফতারের সময় ব্যাপক লোডশেডিং হলেও এ বছর পরিস্থিতি একটু ব্যতিত্রুম-- এমন মন্তব্য প্লাস্টিক ব্যবসায়ী শাজাহানের।
তিনি বলেন, বিগত কয়েক রমযানের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে এবার চিত্রটা একটু ভিন্ন। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে আমার কারখানায়ও কাজ করতে পারছি অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে।
রোববার ১৬ রোযা অতিত্রুম করলেও সেহরি ও ইফতারের সময় সে রকম কোনো লোডশেডিংয়ে পড়তে হয় নাই নগরবাসীকে। নতুন ঢাকা, পুরাতন ঢাকার সব জায়গায়ই পরিস্থিতির এ উন্নতিতে রাজধানীবাসীর মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি বিরাজ করছে। অনেকেই বলছেন, আহ্! এ রকম যদি সারা বছর থাকতো।
তবে রমযান শুরু হওয়ার পর তেমন কোনো গরম না পড়া’ই লোডশেডিং না হওয়ার মূল কারণ বলে মন্তব্য অনেকের। তাদের মতে, সামনে গরম পড়লেই আবার শুরু হয়ে যাবে সেই বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার খেলা। সামনে বিদ্যুৎ লুকোচুরি না করে সেদিকে সরকারকে নজর দিতে বললেন অনেকেই।
অনেকের দাবি, সাম্প্রাতিক সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিয়ে গণমাধ্যম, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ জ্বালানি উপদেষ্টাকে যেভাবে তুনোধুনো করতে শুরু করছিল তা থেকে কিছুটা রেহাই পেতেই তার পরামর্শে রমযানে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
কুইক রেন্টালে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করেই রমযানে বিদ্যুৎ সরবরাহের এই ইতিবাচক উন্নতি বলে দাবি করছেন অনেকে। তারা দাবি করেছেন, রমযানের পর যেন এ অবস্থা বহাল রাখা হয়।
অনেকের অভিযোগ, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কুইক রেন্টালের নামে যে দুর্নীতি হয়েছে তা একটু কম করলেই হয়তো আমাদের দূর্ভোগ কিছুটা কমতো।
তথ্যের শুভঙ্করের ফাঁকি নয়, চাই বিদ্যুৎ
বিদ্যুতের উৎপাদন ও লোডশেডিং নিয়ে পিডিবি বিভিন্ন সময় যে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয় তাতে কোনো মাথা ব্যথা নেই সাধারণ মানুষের। তাদের দাবি শুভঙ্করের ফাঁকি হউক আর পুকুর চুরিই হোক, তাতে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই, আমরা বিদ্যুৎ পেলেই খুশি। রাজধানীর মৌচাকের গৃহবধূ রনি বললেন এ কথা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আজাদ বললেন, লোড শেডিং না থাকলেই আমরা খুশি। পিডিবি’র ওয়েব সাইটে কী তথ্য দিল আর না দিল তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না। পিডিবি’র ওয়েব সাইটে কতো উৎপাদন হলো আর কতো চাহিদা সেটা নিয়ে আমাদের কাজ নেই। বিদ্যুৎ পাচ্ছি, এটাই স্বস্তির, ব্যস!
তবে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের আগ্রহ আছে অন্য রকম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের ছাত্র খাইরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যখন ব্যাপক লোডশেডিং হয় তখন ফুরসৎ পেলে পিডিবি’র ওয়েবসাইটে ঢুকি। তাদের তথ্যে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নই। তাদের তথ্যে মাঝেমধ্যে বাস্তবতার সাথে এমন গড়মিল থাকে যে তাদের হিসাবকে ‘ভুতুড়ে’ আর ‘বানোয়াট’ মনে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, ০৫ আগস্ট, ২০১২
এনএম/সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর