নীলফামারী: প্রচণ্ড গরমে নেই বিদ্যুৎ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্রামে থাকছে না পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ।
আর যারা একটু আরামের জন্য এসি, আইপিএস, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন নিয়েছেন, তাদেরও জ্বালার শেষ নেই। দিনে যে বিদ্যুৎ মিলছে, তাতে আইপিএসের ব্যাটারিই চার্জ হচ্ছে না। বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
ইরি-বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে না পারায় জমি ফেটে চৌচির গেছে।
প্রচণ্ড খরায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় বেশির ভাগ নলকূপ ও মোটরে পানি উঠছে না, উঠলেও অনেক কম। ফলে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। অনেকে ধার-দেনা করে ১৬০ ফুট ও তারও বেশি গভীরতা দিয়ে সাবমারসিবল পাম্প বসাচ্ছেন। পানির নিচে এ পাম্প বসিয়ে খাবার ও সেচের পানির ব্যবস্থা করছেন। এতে বাড়তি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। অনেকে গর্ত করে শ্যালো মেশিন বসিয়ে কোনো রকমে ইরি-বোরো জমিতে সেচ দিচ্ছেন।
বৈশাখে খাঁ খাঁ করছে জনপদ। জেলার ছয়টি উপজেলার ৬১টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলা মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কোনো কোনো এলাকায় অনেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)- এ দুটি লাইন ব্যবহার করছেন। তবুও চাহিদামতো বিদ্যুৎ মিলছে না।
এরই মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপকেন্দ্র এলাকাবাসী ঘেরাওয়ের উদ্যোগ নিলে পুলিশ তা প্রতিহত করে। সব এলাকায়ই ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।
সূত্রটি জানায়, বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ৩২ মেগাওয়াট। সেখানে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৩ থেকে ১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। চাহিদার অর্ধেকও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিদ্যুতের লোড ম্যানেজমেন্ট বা রেশনিং ব্যবস্থা হিমশিম খাচ্ছে। লোডশেডিং ভয়াবহভাবে বেড়েছে। গত ১ এপ্রিল থেকে এ লোডশেডিং ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিনে ১০ থেকে ১২ বার হচ্ছে লোডশেডিং। একবার বিদ্যুৎ গেলে ঘণ্টার আগে ফিরে আসছে না।
অপর একটি সূত্র জানায়, ভয়াবহ লোডশেডিং থেকে রক্ষা পেতে যারা বিকল্প বিদ্যুতের উৎস আইপিএস কিনেছেন, তাদেরও কোনো লাভ হচ্ছে না। সেই আইপিএসের ব্যাটারিও চার্জ না হয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লো-ভোল্টেজ ও ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। ফলে চরম বেকায়দায় পড়েছেন বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা।
সৈয়দপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক হানিফ উদ্দিন বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে বলেন, একে তো ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। তার ওপর বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে অন্যায় অযৌক্তিকভাবে ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া আদায় করে গ্রাহকদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে অযৌক্তিক চার্জ দয়া করে বন্ধ করুন এবং সেই সঙ্গে অতীতে নেওয়া অযৌক্তিক চার্জের টাকা অসহায় গ্রাহকদের ফেরত দিন।
সৈয়দপুরে ননস্টিক তৈজসপত্র ও প্রেসার কুকার তৈরির প্রতিষ্ঠান নোয়াহ্ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজকুমার পোদ্দার জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা কুলাতে পারছি না। চাহিদামতো সরবরাহ দিতে পারছি না মালামাল। মেশিনপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ছয়টি মোটর পুড়ে গেছে আমার কারখানার।
এ নিয়ে নেসকোর সৈয়দপুর বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (আবাসিক) উজ্জ্বল আলির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা যাবে না। ওপরের নির্দেশ নেই। শুধু এটুকু জানবেন, চাহিদা মতো বিদ্যুৎ মিলছে না।
রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ও নীলফামারীর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, চাহিদামতো বিদ্যুৎ না মেলায় গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ সমস্যা সমাধানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কাজ করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে ধানের উৎপাদন কমে যেতে পারে। তাই এ সময়ে অবশ্যই জমিতে দু্ই থেকে আড়াই ইঞ্চি পানি ধরে রাখতে হবে। অতি তাপপ্রবাহে ধান-পাট ছাড়াও আম, কাঁঠাল, লিচুর ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেটা কৃষির জন্য অসহনীয়।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, এ জনপদে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠনামা করছে। এরপর তাপমাত্রা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় শহর ও গ্রামে আগুন নেভানোর পানির উৎস আর নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় বাড়িঘর, মিল-ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগলে দমকল বাহিনীর করার কিছুই থাকবে না বলে মনে করেন জেলার সচেতন মহল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
এসআই