ঢাকা: পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থায়নে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে।
চুক্তি মতে, রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি উন্নয়ন গবেষণার জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার (৫০ কোটি ডলার) ঋণ পাবে বাংলাদেশ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হওয়ার আগে আরো বেশ কিছু প্রাথমিক কাজ রয়েছে। মূল কাজ শুরু হতে আরো ২ বছর সময় লাগবে। তার আগে ২ হাজার পরমাণু বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে হবে। আগামী নভেম্বরে রাশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে। ’
ইআরডি সূত্রে জানা যায়, রূপপুরে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণের কারিগরি গবেষণার জন্য ৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আরো অর্থ লাগবে। কারিগরি গবেষণা শেষ হওয়ার পাঁচ বছর পর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কাজ শুরুর আগে এখনো বেশ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে আর্থিক বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। পরিবেশগত ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশ্লেষণ করতে হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাইট সেফটি রিপোর্ট চূড়ান্ত করতে হবে।
পারমাণবিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত দলিল প্রণয়ন, সাইট লাইসেন্স এবং নির্মাণ লাইসেন্স গ্রহণে প্রয়োজনীয় কার্যাবলী চূড়ান্ত করতে এখনো ঢের বাকি। এছাড়া চুক্তির প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করা, প্রশিক্ষিত যোগ্য ও দক্ষ জনবল তৈরি করা এবং প্রকল্প সাইট ও সাইট অফিসের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও এখনো বাকি রয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের আগেই আলাদা আলাদা স্টাডি শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর এসব স্টাডি করতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অপরিহার্য কার্যাবলী সম্পাদন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উল্লিখিত কাজ বাস্তবায়ন করবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি টাকা।
সরকারি কোষাগার থেকে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। আগামী জুন থেকে শুরু করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের আগেই সকল জরিপ ও যাচাইকাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। এছাড়া আগামী বছরের মধ্যেই মূল কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া সফরে যায়। ওই সফরে অর্থনৈতিক উপদেষ্টার সঙ্গে অন্যাদের মধ্যে ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান এস এ সামাদ এবং অর্থ, পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন ও বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিরা। রাশিয়াতে দেশটির ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়।
শনিবার এ প্রতিনিধি দল দেশে ফিরেছে।
সূত্র জানায়, ৫ বছরের মধ্যেই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায় সরকার। গত মাসে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে রাশিয়া সরকার। এ জন্য আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে জাতীয় গ্রিডে এক হাজার মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎ যোগ হবে।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে এক গ্রাম ইউরেনিয়াম থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তা উৎপাদন করতে তিন টন কয়লার প্রয়োজন হয়। সাধারণত গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়েও পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কম। প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ দুই টাকার নিচে থাকে। উৎপাদন শুরুর ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে নির্মাণ খরচ উঠে আসবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]