ঢাকা : বিদ্যুৎ ব্যবহারে শনিবার থেকে গ্রাহকদের বাড়তি মাসুল গুনতে হবে। মাসুলের পরিমাণ চলতি সপ্তাহেই ঘোষণা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ।
এ দফায় পাইকারি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং এর থেকে কিছুটা কম পরিমাণে খুচরা(গ্রাহক পর্যায়ে) দাম বাড়ানো হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে গত ২৬ জুলাই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়। তবে ওইদিন সকালে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও দুপুরে তা বাতিল করে দেয় বিইআরসি।
বিইআরসি সদস্য সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তারা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। চলতি সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
তিনি আরো জানান, ঘোষণা যাই আসুক ঘোষিত দর ১ সেপ্টেম্বর থেকেই কার্যকর করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
গত জুন মাসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫০ শতাংশ এবং বিতরণকারী সংস্থাগুলো গ্রাহক পর্যায়ে কমবেশি ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। এসব প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৬ জুলাই শুধু পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম ২২ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিলের ধাপ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছে বিইআরসি। গত ১ মার্চ বিইআরসি বিদ্যুতের বিল কাঠামো বা প্রচলিত ধাপ পদ্ধতি চালু করে। এতে গ্রাহকদের অনেক ক্ষেত্রে কয়েকগুণ বাড়তি বিল দিতে হয়।
বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ০৫ পয়সা। ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ২৯ পয়সা এবং ৪০০-এর বেশি ইউনিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৮৯ পয়সা হারে দাম আদায় করা হচ্ছে।
কেউ ৪০১ ইউনিট ব্যবহার করলে তাকে প্রথম ইউনিট থেকেই প্রতি ইউনিট ৭ টাকা ৮৯ পয়সা দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে মিডিয়া সরকারের কঠোর সমালোচনা করে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বিইআরসির সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং বিলকাঠামো পরিবর্তনের নির্দেশ দেন।
বিইআরসির সদস্য সেলিম মাহমুদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই বিদ্যমান বিল কাঠামোতে ৩ ধাপের পরিবর্তে ৭টি ধাপ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, নতুন কাঠামো অনুসারে প্রথম স্তর ০ থেকে ৭৫ ইউনিট, দ্বিতীয় স্তর ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট, তৃতীয় স্তর ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট, চতুর্থ স্তর ৩০১ থেকে ৪০০, পঞ্চম স্তর ৪০১ থেকে ৫০০, ষষ্ঠ স্তর ৫০১ থেকে ৭০০ এবং শেষ স্তরটি ৭০১ এর ওপরে হচ্ছে।
তবে কোন ধাপে কত দর নির্ধারণ করা হচ্ছে সে বিষয়ে জানাতে রাজি হননি তিনি।
বতর্মান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫ বার, খুচরা দাম ৬ দফা বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে খুচরা দাম বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুধু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৫৭ ভাগ বাড়ায়। এরপর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকদের গড়ে ৬ দশমিক ৩২ টাকা ভাগ দাম বাড়ানো হয়।
এরপর ১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ায়। এরপর একই বছরের ডিসেম্বর মাসে পাইকারি দর ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ৭ দশমিক ০১ শতাংশ সর্বশেষ ১ মার্চ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
উল্লেখ্য, বিদ্যু উন্নয়ন বোর্ডর (পিডিবি) পাইকারি দাম ৫০ শতাংশ সমান ২ টাকা ০১ পয়সা দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। যা বর্তমানে রয়েছে ইউনিট প্রতি ৪টাকা ০২ পয়সা।
পিডিবির প্রস্তাব অনুসারে ৫০ শতাংশ হারে দাম বাড়ালেও চলতি অর্থবছরে তাদের ঘাটতি থাকবে ইউনিট প্রতি ৮৪ পয়সা। ২০১২-১৩ অর্থবছর শেষে তাদের মোট ঘাটতি দাঁড়াবে ৩৬ হাজার ৮৪২ মিলিয়ন টাকা।
বিইআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কাজ চলছে। শিগগিরই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহেও হতে পারে আবার আগামী সপ্তাহেও হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১২
ইএস/ সম্পাদনা : নজরুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর