ঢাকা: বর্তমান সরকারের আমলে সপ্তমবারের মতো এবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছে ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির এ ঘোষণা দিয়েছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন।
পাইকারি দাম বাড়ানোর ব্যাপারে গণশুনানি হলেও বিদ্যুতের খুচরা দাম বাড়ানো হলো কোনো শুনানি ছাড়াই।
দাম বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটে গড় খুচরা মূল্য ৫ টাকা থেকে বেড়ে হলো ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। পাইকারি দাম ৪ টাকা দুই পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়াল ৪ টাকা ৭০ পয়সা টাকা।
বিদ্যুতের খুচরা দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের করা ৩টি স্লাবকে(ধাপ)ভেঙ্গে মোট ছয়টি ধাপ করা হয়েছে। ধাপগুলো হচ্ছে:
প্রথম ধাপ (শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট)
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহকদের জন্য ইউনিটপ্রতি তিন টাকা ৬৬ পয়সা এবং অন্য সব সংস্থার ( বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি., ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লি., ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) ক্ষেত্রে তিন টাকা ৩৩ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ধাপে আরইবির ক্ষেত্রে ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য সংস্থার ক্ষেত্রে ৯.১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপ (৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট)
আরইবিতে দাম পড়বে ৪ টাকা ৩৭ পয়সা, অন্যান্য সংস্থায় পড়বে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। এতে আরইবির ১০.২৫ শতাংশ এবং অন্যদের ১০.২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
তৃতীয় ধাপ (২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট)
আরইবিতে ইউনিটপ্রতি দাম ৪ টাকা ৫১ পয়সা এবং অন্য সব সংস্থায় ৪ টাকা ৮৩ পয়সা। এ ধাপে আরইবির ১৪ শতাংশ অন্যদের ১২.৫৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
চতুর্থ ধাপ (৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট)
আরইবিতে দাম ৭ টাকা ১০ পয়সা, অন্য সংস্থার জন্য ৪ টাকা ৯৩ পয়সা। এ ধাপে আরইবির গ্রাহকদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং অন্যদের ১৪.৯২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
পঞ্চম ধাপ (৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট)
আরইবিতে ৭ টাকা ৪০ পয়সা, অন্যদের জন্য পড়বে ৭ টাকা ৯৮ পয়সা। সবচেয়ে কম দাম বাড়ানো হয়েছে এই ধাপে। যেখানে আরইবির ১.৪২ এবং অন্যদের ১.১৪ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে।
ষষ্ঠ ধাপ (৬০০ থেকে ওপরে)
আরইবিসহ সব সংস্থায় পড়বে ৯ টাকা ৩৮ পয়সা। এ ধাপে আরইবির ৮.৬৯ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ১৮.৮৮ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে।
আগের ধাপ পদ্ধতিতে কঠোর সমালোচনার কারণে এবার কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে পরবর্তী ধাপে চলে গেলে মোট ব্যবহৃত ইউনিটের ওপর পরবর্তী ধাপের দাম কষা হতো।
কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে প্রতিটি ধাপের সুবিধা পাবেন আবাসিক গ্রাহকেরা। কেউ যদি তৃতীয় ধাপের ব্যবহারকারী হন তাহলে তার আগের ধাপের দাম রেখে তৃতীয় ধাপের অংশে ব্যবহৃত বিদ্যুতের জন্য নির্ধারিত মূল্য আদায় করা হবে বলে জানান বিইআরসির চেয়ারম্যান।
কৃষির সেচ গ্রাহকদের জন্য আরইবির প্রতি ইউনিট দর করা হয়েছে ৩.৭৬ টাকা। যা অন্যান্য সংস্থার জন্য ২.৫১ টাকা।
ক্ষুদ্র শিল্প, বাণিজ্যিক ও অফিসের ক্ষেত্রে সব সংস্থার একই রেট ধরা হয়েছে। বাণিজ্যিক ও অফিস শ্রেণীর গ্রাহকদের প্রতি ইউনিটের মূল্য পরিশোধ করতে হবে ৯ টাকা হারে। ক্ষুদ্র শিল্পে প্রতি ইউনিটের দাম ধরা হয়েছে ৬.৯৫ টাকা।
শিল্পে ১১ কিলোওয়াট ভোল্ট (কেভি) ৬.৮১, ৩৩ কেভিতে ৬.৪৮ টাকা ও ১৩২ কেভিতে ৬.১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন জানান, চলতি বছর বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ২০ শতাংশ। আর সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে তিন হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
বিইআরসি নতুন এই আদেশে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে গড় সিসটেম লস ১১.২৩ শতাংশ ধরে ও লাভজনক বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাসগুলোর একটি অংশ দিয়ে অলাভজনক সংস্থাগুলোর ঘাটতি লাঘবের জন্য ‘এনার্জি সাপোর্ট ফান্ড’ প্রবর্তনের প্রস্তাব করেছে।
এ ঘোষণা দেওয়ার সময় বিইআরসির সদস্য প্রকৌশলী ইমদাদুল হক, ড. সেলিম মাহমুদ ও মো. দেলোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত জুনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৫০ শতাংশ এবং বিতরণকারী সংস্থাগুলোর গ্রাহক পর্যায়ে কমবেশি ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে। এসব প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৬ জুলাই শুধু পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি গণশুনানিতে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ২২ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল।
বৃহস্পতিবারের ঘোষণার আগে পর্যন্ত আবাসিক গ্রাহকদের জন্য ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম ৩ টাকা ৫ পয়সা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪ টাকা ২৯ পয়সা এবং ৪০০-এর বেশি ইউনিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৭ টাকা ৮৯ পয়সা হারে দাম আদায় করা হচ্ছিল।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে শুধু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর ২০১০ সালের মার্চে আরইবি ছাড়া অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকদের গড়ে ৬ দশমিক ৩২ টাকা শতাংশ দাম বাড়ানো হয়।
তৃতীয় দফায় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫ ভাগ খুচরা দাম বাড়ায়। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে চতুর্থ দফায় ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, পঞ্চম দফায় চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে ৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং সর্বশেষ ষষ্ঠ দফায় ১ মার্চ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ খুচরা দাম বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর, রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]