ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১২
বিদ্যুতের পর গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু

ঢাকা: বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ৭ ধরণের গ্যাস ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর জন্য পেট্রোবাংলার দেওয়া প্রস্তাব মূল্যায়ন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিইআরসির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন।



আবাসিক ছাড়া ৭ ধরণের ব্যবহারকারীরা হলেন— বিদ্যুৎ, সার, ক্যাপটিভ পাওয়ার, শিল্প, চা-বাগান, বাণিজ্যিক ও সিএনজি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০২.৯৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে।

সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “পেট্রোবাংলা ৭ ধরণের ব্যবহারকারীর গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় গত ২০ মে তারিখে। পেট্রোবাংলার প্রস্তাবের বিষয়ে আমাদের কিছু ক্যয়ারি ছিল। সে কারণে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি কিছু তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। পেট্রোবাংলা বিইআরসির চিঠির জবাব দিয়েছে। ”

বিইআরসির চেয়ার‌ম্যান বলেন, “বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে এতদিন আমরা ব্যস্ত ছিলাম। তাই এদিকে নজর দিতে পারিনি। ”

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলেও জানান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন।

বিইআরসি সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, “পেট্রোবাংলার প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগিরই গণশুনানির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হবে। ”

পেট্রোবাংলা বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বর্তমান মূল্য (প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট) ৭৯.৮২ টাকা থেকে ৫.২৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৮৪ টাকা, সার উৎপাদন খাতে ৭২.৯২ টাকা থেকে ৯.৭১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮০ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১১৮.২৬ টাকা থেকে ১০২.৯৪ শতাংশ বাড়িয়ে ২৪০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে।

শিল্পে ১৬৫.৯১ টাকা থেকে ৩২.৬০ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ টাকা, চা বাগান খাতে ১৬৫.৯১ থেকে ২০.৫৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০০ টাকা, বাণিজ্যিক খাতে ২৬৮.০৯  থেকে ৩০.৫৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি) ৬৫১.২৯ টাকা থেকে ৩৯.১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৯০৫.৯২ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮৫ শতাংশ আর সার উৎপাদন শতভাগ গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আহরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম অন্যান্য জ্বালানির চেয়ে কম হওয়ায় এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে অস্বাভাবিক রকমের দাম কম হওয়ায় এর যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে অপচয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার এই খাত থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া শিল্পের তুলনায় ক্যাপটিভ পাওয়ারে দাম কম হওয়ায় অদক্ষ ব্যবহারের বিষয়টি উৎসাহিত হচ্ছে।

গ্যাস সেক্টরের সিংহভাগ কোম্পানি দীর্ঘদিনের পুরনো হওয়ায় সম্পদের বুক ভ্যালু প্রায় শূন্যের কোটায় চলে এসেছে।

কোম্পানিগুলোর সম্পদ পুন‍ঃমূল্যায়ন না করার ফলে গ্যাস উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর ২০১২-১৩ অর্থ বছরে প্রক্কলিত বাজেট অনুযায়ী মূলধনী ব্যয় নির্বাহ কল্পে তথা সম্পদের প্রতিস্থাপনকল্পে অপচয় (depreciation) খাতে পর্যাপ্ত তহবিলের ব্যবস্থা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

বিভিন্ন কারণে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থের বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। অথচ গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মূলধনী খাতে বিনিয়োগের বিকল্প নেই।

পেট্রোবাংলা তার প্রস্তাবে আরো উল্লেখ করেছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর (আইওসি) কাছ থেকে ডলারে গ্যাস কিনছে পেট্রোবাংলা। সে ক্ষেত্রে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে পেট্রোবাংলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানান, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের গ্যাসের দাম কম। দাম কমের কারণে অনেক ক্ষেত্রে অপচয় হচ্ছে। দাম বৃদ্ধি হলে অপচয় কমে আসবে বলেও দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের শিল্প গ্রাহকদের প্রতি মিলয়ন ঘনফুট গ্যাসের দাম নেওয়া হচ্ছে ১৬৫.৯১ টাকা। একই খাতে ভারতে নেওয়া হয় ২৪৫.৯০ টাকা, পাকিস্তানে ৪৫৮.৪৩ টাকা।

বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশে নেওয়া হয় ৭৯.৮২ টাকা ভারতে ৫২০.৩০ টাকা এবং পাকিস্তানে ৪৫৮.৪৩ টাকা।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০০৯ সালে বিইআরসি সব ধরনের গ্যাসের মূল্য ১১ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়িয়েছিল। এছাড়া গত বছরে দু’ দফায় সিএনজির দাম বাড়িয়ে প্রতি ঘনমিটার ৩০ টাকা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর  [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।