বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে: বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কোটি ডলারের অ্যাশ(ছাই)নষ্ট হচ্ছে। দেশের অ্যাশ যখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঠিক তখন সিমেন্ট শিল্পের প্রয়োজনীয় এই উপাদান আমদানি করতে ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলীর উদ্যোগের অভাবে কোটি ডলারের সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে অ্যাশ্ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় নানা রকম চর্মরোগ ছড়াচ্ছে। যে কারণে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সম্পর্কে স্থানীয়দের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।
অ্যাশ সিমেন্ট শিল্পের অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশের সিমেন্ট কারখানাগুলোতে প্রতিটন অ্যাশ্ ২৩ থেকে ২৪ ডলার খচর করে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আর ঠিক সেই সময়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অ্যাশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে দৈনিক অ্যাশ তৈরি হচ্ছে ২৪০ টন। সে হিসেবে ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদিত অ্যাশ্’র পরিমাণ দাঁড়ানোর কথা প্রায় ৫লাখ টন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতায় উৎপাদন করতে না পারায় কিছুটা কম হয়ে থাকতে পারে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান বড়ুপুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি(বিসিএমসিএল)সুত্র জানিয়েছে এ পর্যন্ত তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৩৪লাখ টন কয়লা সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল গত অক্টোবর মাসে ৬৭হাজার টন।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধার প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক বাংলানউজকে জানান, “ ব্যবহৃত কয়লার সোয়া ১২ শতাংশ অ্যাশ্ তৈরি হয়। ”
বিসিএমসিএল’র হিসেবেও প্রায় ৪লাখ ১৬হাজার টন অ্যাশ্ তৈরি হওয়ার কথা। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ডলার। বিপুল পরিমাণ এই সম্পদ নিয়ে পিডিবি কিংবা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রধান প্রকৌশলীর কোনই উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। দিনের পর দিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের পার্শ্বের জমিতে ফেলা হচ্ছে এই মূল্যবান অ্যাশ্।
প্রায় ৩০০একর জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে অ্যাশ্। এগুলো অধিগ্রহণ করা জমির বাইরে কৃষি জমি ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন রামভদ্রপূর গ্রামের কৃষক ওবায়দুল হক।
অ্যাশ বাতাস ও বৃষ্টির পানির সঙ্গে চলে যাচ্ছে তিলাই নদী হয়ে মরা যমুনায়। এতে করে নদীর পানিতে মাছ বাঁচতে পারছেনা। মাহবুব নামের এ স্থানীয় দাবি করেছে নদীর পানি ব্যবহার করলে পায়ে ও শরীরে ফোসকা পড়ছে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ঘা তৈরি হচ্ছে।
তিলাই নদীর মুখে কাপড় বসিয়ে রামপুরা গ্রামের ফরমান আলীর পুত্র বাচ্চু মিয়া কাপড় দিয়ে পানি ছেঁকে অ্যাশ্ ধরে বাজারে বিক্রি করছে।
এতে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় হচ্ছে। একই সঙ্গে এলাকার পরিবেশ বিপন্ন করে তুলছে।
বড়পুকুরিয়া পানি বিদ্যুৎ ও কর্মসংস্থান আদায় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ওবায়দুল হক বাংলানউজকে জানান, “বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এলাকার পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। আমরা বলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষ নিজ উদ্যোগে পথে নেমে আসবে। ”
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নিরাপত্তাকর্মীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানউজকে জানান, “ স্তুপ করা ছাই বাতাসের সঙ্গে উড়ে যাচ্ছে। এতে তারাও ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ”
অ্যাশ্’র স্তুপ করা হয়েছে পাম্প হাউস থেকে ২০ গজ দুরে। সেখানে কর্মরত এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ বাতাসে ছাই উড়ে আশায় সেখানে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে তার শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ”
এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধার প্রকৌশলী মঞ্জুরুল হক বাংলানউজকে জানান, ২০০৬ সালে অ্যাশ্ বিক্রি করার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তখন একজন দরদাতা কোর্টে গিয়ে রিট দাখিল করলে কোর্ট স্থিতিবস্থা জারি করে। আমরা অনেক চেষ্টা করেও স্থিতিবস্থা প্রত্যাহারে ব্যর্থ হয়েছি। যে কারণে অ্যাশ্ বিক্রি করা যাচ্ছে না।
তবে তিনি তার গাফিলতির কথা অস্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০০৬ সালে স্থাপন করা হয়। এখানে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২টি ইউনিট রয়েছে। এখানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ৪ টাকার মত।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর; [email protected]