ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ ভবনে মহড়া: দরপত্র কিনতে বাধা!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৩
বিদ্যুৎ ভবনে মহড়া: দরপত্র কিনতে বাধা!

ঢাকা: বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) ‘সন্ত্রাসীদের’ মহড়ার কারণে ঠিকাদাররা দরপত্র কিনতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শিকদার এন্টারপ্রাইজ নামে একটা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাড়াটে লোকজন এখানে মহড়া দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।



এ বিষয়ে পিডিবি চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মেসার্স সোমা ট্রেডার্স নামে রাজশাহীর এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, রাজশাহী শালবাগান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ট্রান্সফরমার রিপেয়ারিং ওয়ার্কশপ নির্মাণ দরপত্র নিয়ে এ ‘সন্ত্রাসী মহড়া’-র ঘটনা ঘটেছে।

শুরু থেকেই টেন্ডার নিয়ে পিডিবির নকশা-৩ এর পরিচালক চৌধুরী নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেন ঠিকাদাররা।

তারা অভিযোগ করেন, এর আগে সর্বনিম্ন দরদাতাকে না দিয়ে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তখন এ সংক্রান্ত একটা রিপোর্ট বাংলানিউজে প্রকাশিত হলে বাধ্য হয়ে আবার দরপত্র আহ্বান করে পিডিবি।

পুনঃদরপত্রে রোববার দরপত্র ক্রয়ের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিদ্যুৎভবন ও ওয়াপদা ভবন থেকে দরপত্র বিক্রি করার কথা থাকলেও কয়েকদিন ঘুরেও ওয়াপদা ভবনে অনেক ঠিকাদারই দরপত্র পাননি। শুরু থেকেই এখানে বিভিন্ন রকমের লুকোচুরির আশ্রয় নেওয়ার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঠিকাদাররা জানান, কয়েকদিন ধরেই বিদ্যুৎভবনে টেন্ডার বাক্সকে ঘিরে মহড়া দিচ্ছে শিকদার এন্টারপ্রাইজের ভাড়াটে লোকজন। এ কারণে সেখানে গিয়ে দরপত্র কিনতে সাহস পাচ্ছেন না তারা।

এদিকে, ওয়াপদা ভবনে দরপত্র না পাওয়ার বিষয়টি ঠিকাদাররা মৌখিকভাবে  জানালে গত মঙ্গলবার মাত্র ২টি দরপত্র সেখানে পাঠানো হয়।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, ওয়াপদা ভবনে দরপত্র পাঠানোর আগেই খবর দেওয়া হয়, শিকদার এন্টারপ্রাইজকে। আর শিকদার এন্টারপ্রাইজ ওয়াপদা ভবনে গিয়ে ওই দরপত্র দু’টি কিনে নিয়ে আসে, যাতে করে ওই দরপত্রে আর কেউ অংশ নিতে না পারে।

পরে আবার মৌখিক অভিযোগ দিলে বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার আবার ২টি দরপত্র পাঠানো হয়। সেখানে দু’টি প্রতিষ্ঠান কিনলেও তাদের না ফেলার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সোমা ট্রেডার্স পিডিবির চেয়ারম্যান কাছে একটা লিখিত আবেদন করে ‘সন্ত্রাসীদের’ ভয়ে দরপত্র নিতে না পারার বিষয়টি জানায়।

লিখিত আবেদনে সোমা ট্রেডার্স জানায়, কাজটা যেহেতু রাজশাহী এলাকার, তাই রাজশাহীতেও দরপত্র বিক্রির ব্যবস্থা করা হোক। রাজশাহীতে দরপত্র বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে স্থানীয় ঠিকাদাররা নির্ভয়ে অংশ নিতে পারবেন। তাতে সরকারের টাকাও সাশ্রয় হবে।

এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার বাংলানিউজকে জানান, পুনঃদরপত্র আহ্বানের পর থেকেই শিকদার এন্টারপ্রাইজের ভাড়াটিয়া গুন্ডা সুমনের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নকশা শাখা পাহারা দিচ্ছেন।

এদিকে, বেশ কয়েকজন ঠিকাদার দরপত্র কিনতে গেলে প্রথমে তাদের দরপত্র না কেনার অনুরোধ ও পরে কৌশলে হুমকি দেওয়া হয় বলেও জানান ওই ঠিকাদার।

এ বিষয়ে নকশা-৩ এর পরিচালক চৌধুরী নুরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, “দরপত্র নিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। ওয়াপদা ভবন থেকে দরপত্র চাওয়া হলেই পাঠানো হবে। ”

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার অফিস থেকে মাত্র দুটি দরপত্র বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, “কারো দরপত্র প্রয়োজন হলে আমার কাছে আসতে বলেন। ”

উল্লেখ্য, প্রথম দফায় রাজশাহী শালবাগান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ট্রান্সফরমার রিপেয়ারিং ওয়ার্কশপ নির্মাণ প্রকল্পে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৮টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়।

এ দরপত্র খোলা হয় গত বছরের ২৬ আগস্ট। এতে সর্বনিম্ন দর জমা দেয় মেসার্স মুনির এন্টারপ্রাইজ (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ঢাকা) ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫১৫ টাকা।

দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দর জমা দেয় মেসার্স কবির ট্রেডার্স (বগুড়া) ৬৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৪ টাকা। তৃতীয় সর্বনিম্ন দর জমা দেন মেসার্স এসএস এন্টারপ্রাইজ (রাজশাহী) ৭৮ লাখ ১ হাজার ১৫৯ টাকা।

আর সর্বোচ্চ দর জমা দেন মেসার্স শিকদার এন্টারপ্রাইজ (ঢাকা) ১ কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

নিয়মানুযায়ী, সর্বনিম্ন দরদাতা মুনির এন্টারপ্রাইজের কাজটি পাওয়ার কথা। কিন্তু তাকে না দিয়ে ৪৬ লাখ টাকা বেশিতে সর্বোচ্চ দরদাতা শিকদার এন্টারপ্রাইজকে কাজ দিতে গোপনে সব চূড়ান্ত করা হয়।

ঠিক ওই সময়ে বাংলানিউজে খবর প্রকাশের পর সব কিছু ভণ্ডুল হয়ে যায়। তার পরও  ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৩
ইএস/ সম্পাদনা: জয়নাল আবেদীন, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।