ঢাকা: বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পরিচালক চৌধুরী নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি।
জানা গেছে, এ কর্মকর্তার নামে টঙ্গীতে ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক। কিন্তু দুর্বল চার্জশিটের কারণে রেহাই পেয়ে যান তিনি। এমনকি ২০০ টাকা দামের ফুলের টব ১০ হাজার টাকায় কেনার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ১২ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন ১২০টি টব। এর জন্য তিনি কোনো টেন্ডার আহ্বান করেননি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টবে যে সব চারা লাগানো হয়েছে সেগুলোরও দাম আহামরি কিছু নয়। বেশির ভাগই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও শোভা বর্ধনকারি গাছ। এর মধ্যে রয়েছে গোলাপ, মেহেন্দী ও পাতা বাহারের চারা। যার বেশিরভাগই মরে শুকিয়ে গেছে।
পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, খুব বেশি হলে লাখ টাকার মত খরচ করা হয়েছে কাজটির জন্য। বাকি টাকা গোধুলী এন্টারপ্রাইজ ও পিডিবির কর্মকর্তারা ভাগ বাঁটোয়ারা করে নিয়েছে।
লিমিটেড টেন্ডার প্রক্রিয়ার (এলটিএম) মাধ্যমে অত্যন্ত গোপনে গোধুলী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেওয়া হয়েছিল। পিডিবির নকশা-৩ এর পরিচালক চৌধুরী নুরুজ্জামান ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী থাকার সময় এ টেন্ডারটি দেন। ওই সময়ে বিজ্ঞপ্তি গোপন রেখে ভাগ বাঁটোয়োরা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
এরকম অসংখ্য টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি গোপন করে ভাগ বাঁটোয়ারা করার খবর পাওয়া গেছে। নিয়ম রয়েছে জরুরি প্রয়োজনে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে পিডিবির ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কাজ দেওয়ার।
ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন, বিজ্ঞপ্তি দিয়েই সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের পরে আবার প্রদর্শন করা হয় বিজ্ঞপ্তিটি। অথবা ইচ্ছা করেই কোডিং করে রাখা হয় নির্দিষ্ট পেজটি। যাতে অন্যদের নজরে না পড়ে।
কেরানীগঞ্জ পিডিবির জায়গায় ট্রেনিং একাডেমী কমপ্লেক্সের থ্রিডি ভিউ এনিমেশন ও মডেল, সখিপুরস্থ পিডিবির জায়গায় নির্মীয়মাণ অফিস ভবনের জন্য ফাইল কেবিনেট, ফলস সিলিং স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজের দরপত্র এ প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
চলতি অর্থ বছরে এরকম ১৭টি এলটিএম দেওয়া হয়েছে। যার প্রত্যেকটিতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কাজ দেওয়া হয়েছে পিডিবির কমিশনভোগি ঠিকাদারদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদ্য অবসরে যাওয়া পিডিবির চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির এক চিঠিতে তাকে দরপত্র আহ্বানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক চেয়ারম্যানের লুটপাটে সহযোগিতা করতে তার আস্থাভাজন হিসেবে এখানে বসানো হয় চৌধুরী নুরুজ্জামানকে। পিডিবি চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলেও সোনার ডিম দেওয়া এ পরিচালককে দায়িত্ব থেকে সরাতে আগ্রহী নন কেউই। কারণ তাকে সরালে মাসে মাসে উপঢৌকন পাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কা অনেকের।
চৌধুরী নুরুজ্জামান বাংলানউজকে বলেন, “কোর্ট আমাকে দুর্নীতিবাজ নই বলে সার্টিফাই করেছেন। টঙ্গী বিদ্যৎ কেন্দ্র নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন যে মামলা করেছিল কোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছে। ”
তিনি বলেন, “আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। আমার বিরুদ্ধে যা বলা হয়েছে সব মিথ্যা। ”
পিডিবির ছাদে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ১২ লাখ টাকা লুটপাট প্রসঙ্গে বলেন, “আমি এই টেন্ডার করিনি। অন্যরা করেছেন। ” আপনি তো তখন ডিভিশন-২ এর পরিচালক হিসেবে টেন্ডার করেছিলেন--এমন প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে যান তিনি।
তার অঘোষিত কোনো সম্পদ নেই বলেও দাবি করে চৌধুরী নুরুজ্জামান বলেন, “দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলো চোখে দেখেন না আপনারা?”
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৩
ইএস/সম্পাদনা: মাহমুদুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর/আরআর