ঢাকা: নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে ১৬ এপ্রিল হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে আইনি জটিলতা দূর হয়েছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর তারা নতুন কোনো নির্দেশনা পাননি। আর রায়ের কপি না পাওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা কঠিন।
এদিকে, পেট্রোবাংলা নতুন সংযোগ দেওয়ার পক্ষে থাকলেও ব্যাপকভিত্তিতে গ্যাস সংযোগের বিপক্ষে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী। তার আপত্তির কারণেই বিষয়টি ঝুলে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে। মন্ত্রণালয় বা সচিবের পক্ষে কিছুই বলা সম্ভব নয়। সংযোগ দেওয়া হবে কি হবে না এমন কোনো মন্তব্য করাও কঠিন।
তবে পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন গ্যাস সংযোগের প্রস্তাব পাঠায় পেট্রোবাংলা। প্রস্তাবটি ১০ মার্চ ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় জানতে চেয়ে এ প্রস্তাব ফেরত পাঠানো হয়। পেট্রোবাংলা সব তথ্য যুক্ত করে আবার জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা প্রস্তাব দিয়েছি গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য। মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দিলে আমাদের কিছুই করার নেই। ”
নতুন সংযোগ দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার সময় ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল গ্যাস উৎপাদন ২ হাজার ২শ মিলিয়ন ঘনফুট হলে নতুন সংযোগ দেওয়া হবে। এখন তো দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৩শ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। আর আগের মতো সংকট নেই। ”
তিনি বলেন, “নতুন সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রায় দেড় লাখ আবেদন জমা আছে, যার বেশির ভাগই অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে গ্যাস ব্যবহার করছে। নতুন করে সংযোগ দিলে খুব বেশি চাহিদা বাড়বে না। ” সংযোগ না দিলে সরকারের ক্ষতি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, জানা গেছে, সংযোগ বন্ধ থাকা অবস্থায় তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে কোনোভাবে সংযোগ পেয়েছেন, নিয়মিত বিলও দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু গ্রাহক সংকেত নম্বর নেই, সেই গ্রাহকদের নির্দিষ্ট পরিমাণে জরিমানা করে সংযোগ বৈধ করে দেওয়ার পক্ষে সংসদীয় কমিটি ও পেট্রোবাংলা।
কারণ হিসেবে জানা গেছে, এ সব গ্রাহক বিল দিলেও তা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না। গত বছরের জুন মাসে তিতাস গ্যাসের অ্যাকাউন্টে ১শ কোটি টাকার মতো বাড়তি জমা হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে।
এবিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, প্রায় এক লাখ অবৈধ গ্রাহক বিল দিচ্ছেন। কিন্তু, জটিলতার কারণে তাদের রাজস্ব খাতে নেওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় তাদের বৈধ করে নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
প্রসঙ্গত, সরকার ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের এবং ২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন বলা হয়েছিল, গ্যাসের উত্পাদন দৈনিক ২২০ কোটি ঘনফুটে (২ হাজার ২০০ মিলিয়ন) উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকবে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে সরকার ২০১১ সালে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। নতুন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ দিতে পছন্দ এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে একটি তালিকা করা হয়। বেশ কয়েকটি শিল্প-প্রতিষ্ঠানে সংযোগও দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ১৭ এপ্রিল প্রায় ২ হাজার ২শ এমএমসিএফ গ্যাস উৎপাদন হয়। এ দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৩শ এমএমসিএফ’র চাহিদার বিপরীতে ৮৭৭ এমএমসিএফ, সার উৎপাদনে ২৮৯ এমএমসিএফ চাহিদার বিপরীতে ৭০ এমএমসিএফ ও আবাসিক, শিল্প ও সিএনজিসহ অন্যান্য খাতে সরবরাহ করা হয় ১ হাজার ২৫০ এমএমসিএফ।
দৈনিক প্রায় ৯শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে গ্যাস সংকটের কারণে। এ কারণে বেশ কয়েকটি সার কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৩
ইএস