ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

গ্যাসের অবৈধ বিতরণ লাইন নিয়ে বিপাকে তিতাস

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসেপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৩
গ্যাসের অবৈধ বিতরণ লাইন নিয়ে বিপাকে তিতাস

ঢাকা: শুধু অবৈধ গ্যাস সংযোগ নয়, গোপনে অনেক অবৈধ বিতরণ লাইনও বসানো হয়েছে। আর এই অবৈধ বিতরণ লাইন অপসারণে হিমশিম খাচ্ছে তিতাস গ্যাস।



খোদ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকৌশলী নওশাদ ইসলাম একথা অকপটে স্বীকার করেছেন।

কোম্পানির নতুন এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলানিউজকে জানান, মঙ্গলবার দুপুরে নন্দীগ্রাম বটপাড়া এলাকায় অবৈধ বিতরণ লাইন খুলতে গেলে তিতাসের লোকজনকে ঘেরাওয়ের শিকার হতে হয়। পরে পুলিশ দিয়ে তাদের উদ্ধার করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমাদের বক্তব্য, লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার (জোরালো ও পরিষ্কার)। অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৈধ করা হলেও অবৈধ লাইনের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’। প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, অবৈধ লাইন অপসারণের। ”

রাজধানীর কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে এ প্রবণতা অনেক বেশি। এসব এলাকায় একটি চক্র অবৈধ লাইন বসিয়ে বিতরণ লাইনের সঙ্গে সংযোগ নিয়েছেন। এর সঙ্গে তিতাসের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের এরই মধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিতাস এমডি।

অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও বদলি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে, ২০ জুন বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৈধ করার সুযোগ। এক দফায় সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু, আর সময় বাড়ছে না। এর মধ্যে যারা বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ২৩ জুন থেকে কঠোর অভিযান বলেও জানান এমডি প্রকৌশলী নওশাদ ইসলাম।

তিনি জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে। অবৈধ সংযোগ পেলে দায়ীদের জেল-জরিমানা করা হবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের বৈধ হতে আর সময় দেওয়া হবে না। এর মধ্যে যারা বৈধ হওয়ার আবেদন করবেন, তাদের কোনো হয়রানি করা হবে না।

তিনি বলেন, “গ্যাস সংযোগ চালু হওয়ার পর কিছু ঠিকাদার এবং গ্রাহক অবৈধভাবে বিতরণ লাইন বসিয়ে গ্যাস সংযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে তিতাসের কোনো কোনো কর্মকর্তাও জড়িত বলে জানা গেছে। আমাদের কাছে নকশা রয়েছে, সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”

প্রায় তিন বছর আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকার পর ৭ মে গ্যাস সংযোগ উন্মুক্ত করা হয়। কিন্তু, দীর্ঘদিন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় সারাদেশে প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেন।

এ সময় যারা অবৈধ সংযোগ নিয়েছেন, তাদের স্বেচ্ছায় তথ্য দিয়ে ৩০ মে’র মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৈধ করতে সুযোগ দেয় সরকার। ৩০ মের মধ্যে মাত্র নয় হাজার চারশ ৫৫ জন স্বেচ্ছায় বৈধ হওয়ার আবেদন করেন।

এ সময়ের মধ্যে অবৈধ সংযোগ বৈধ করতে গ্রাহকদের সাড়া না পাওয়ায় পেট্রোবাংলা ২০ জুন পর্যন্ত আরেক দফা সময় বাড়ায়।

এদিকে, তিতাস সূত্র জানিয়েছে, বৈধ হতে চান সোমবার পর্যন্ত এমন ৭৪ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। অন্যদিকে, সম্পূর্ণ অবৈধ সংযোগ নিয়েছেন এমন আবেদন জমা পড়েছে ২২ হাজার আটশ ৪০টি।

অবৈধ গ্রাহকদের এক বছরের বিল ও তিন মাসের বিলের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা (মোট ৬,৭৫০ টাকা) দিয়ে বৈধ হতে সুযোগ দেওয়া হয়। যারা বৈধ হবেন, চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে তাদের সংযোগ বৈধ বলে গণ্য হবে।

উল্লেখ্য, ঘাটতি মোকাবেলায় ২০০৯ সালের ২১ জুলাই শিল্প ও বাণিজ্যিক এবং ২০১০ সালের ১৩ জুলাই আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিল্প সংযোগের জন্য ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ পর্যায়ের এ কমিটি গঠন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৩
ইএস/সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর;জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।