ঢাকা: রাজধানীজুড়ে শনিবার রাত থেকে চলমান গ্যাসের সংকট রোববার বিকেলের মধ্যেই দূর হবে বলে জানিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। ফেটে যাওয়া বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের সঞ্চালন লাইন মেরামত করে সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের সঞ্চালন লাইন ফেটে যাওয়ায় তীব্র গ্যাস সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের অনেক স্থানে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। শনিবার রাত থেকে গ্যাস সরবরাহে এ সংকট শুরু হয়। ১২ ঘণ্টা চেষ্টার পর রোববার সকাল সোয়া ৬টায় লাইন মেরামত করার পর সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে রাজধানীর সব এলাকায় গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে বলে জানা গেছে।
কর্তৃপক্ষ জানান, শনিবার গভীর রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে লাইন মেরামত করা হয়েছে। ওই পাইপলাইন দিয়ে আবার সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে রাজধানীর সব এলাকায় গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হতে বিকাল হয়ে যাবে বলে তিতাস সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের সঞ্চালন লাইন ফেটে যাওয়ার কারণে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, শাজাহানপুর, পল্টন, প্রেসক্লাব, সেগুনবাগিচা, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, হাতিরপুর, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাসা-বাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁয় রান্না বন্ধ থাকায় মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছেন। কোনো কোনো এলাকায় খুবই কম প্রেসার ছিল গ্যাসের। তবে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
শনিবার রাত থেকে গ্যাসের এ সংকটে রাজধানীবাসী রয়েছেন চরম বিপাকে। সিদ্ধেশ্বরী, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই ফোন করে বাংলানিউজকে তাদের নানা ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। অনেকেই বাসায় গ্যাস না থাকায় বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে সকালের নাস্তা সেরেছেন।
তবে গ্যাস সংকটের কারণে অনেক হোটেলও রান্না বন্ধ থাকে। যে কারণে অনেক এলাকায় লোকজন রোববার শুকনো খাবার দিয়ে সকালের নাস্তা সেরেছেন।
তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাহজাহান মিয়া জানান, বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের সাইড লাইনে ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুপুর ১২টার মধ্যেই লাইন মেরামত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে। বিকালের মধ্যে গ্যাস সংকট দূর হয়ে যাবে বলেও তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, শনিবার বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে ছিদ্র ধরা পড়ায় সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেটা এরই মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে মেরামত সম্ভব হয়েছে। তবে প্রসেস প্লান্টে এখনো কিছুটা সমস্যা রয়েছে।
গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি জানান, তবে শূন্য হয়ে যাওয়া পাইপ লাইন পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লেগে যেতে পারে।
এদিকে, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান শেভরন বাংলাদেশ সূত্র জানিয়েছে, বিবিয়ানা ১-এর পাইপ লাইনে ছিদ্র হওয়ার কারণে সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। তবে বর্তমানে সরবরাহ স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জানিয়েছে, গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় কমপক্ষে ১ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে রোববার দিনের বেলা ও সন্ধ্যায় লোডশেডিং বাড়বে। তবে রাতেই বিদ্যুতের উৎপাদন আগের মতই স্বাভাবিক হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।
শেভরন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উৎপাদিত গ্যাসের এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ করা হচ্ছে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে। এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে সাড়ে আট কোটি ঘনফুটের মতো। অন্যদিকে দেশে বর্তমানে সব গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত হচ্ছে সাড়ে বাইশ কোটি ঘনফুটের মতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৩
ইএস/ সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- [email protected]