ঢাকা: স্থানীয়দের বিক্ষোভের ভয়ে দেশের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে প্রায় এক হাজার পদ খালি রয়েছে অনেকদিন ধরেই। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে খনিটির কয়লা উৎপাদন।
শূন্যপদে স্থানীয়দের চাকরিতে না নিয়ে অন্য এলাকার লোক নিয়োগ দিলে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছে কোম্পানি। সে কারণে থমকে আছে নিয়োগ প্রক্রিয়া।
দেশে পাঁচটি কয়লাখনি থাকলেও শুধুমাত্র বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে।
বিসিএমসিএল সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিভিন্ন পদে এক হাজার দুইটি পদ শূন্য রয়েছে।
সরকারি বিধান অনুযায়ী, শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বিসিএমসিএলের। কিন্তু, স্থানীয় জনগণের কোটা পূরণ হওয়ায় তাদের আর নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, সুড়ঙ্গপথে কয়লা উত্তোলনের কারণে বড়পুকুরিয়ার খনি অঞ্চলে মাটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
সরকার মোটা অংকের ক্ষতিপূরণ দিয়ে স্থানীয়দের খনি অঞ্চল থেকে সরিয়ে দিয়েছে। নিজেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার কারণে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলেন খনিতে তাদের আরো চাকরি দেওয়ার জন্য।
এ বিষয়ে জানতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “স্থানীয় লোকদের বাদ দিয়ে নিয়োগ দেওয়া ঠিক হবে না। এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে তা আমরা বাস্তবায়ন করবো। ”
ইতোমধ্যে, স্থানীয়দের সব কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় বিসিএমসিএল কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরিতে নিয়োগ দিতে পারছে না। কোটা পদ্ধতি বা সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে অন্য জেলার লোক নিয়োগ দেওয়া হলে খনি এলাকায় জনরোষ তৈরি হবে। এ কারণে বিসিএমসিএল কর্তৃপক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
খনি সূত্র জানায়, ২০০০ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার আগে বিসিএমসিএলর অর্গানোগ্রাম তৈরি হয়। এ অর্গানোগ্রামে লোকবল ছিল দুই হাজার ছয়শ ৭৪ জন। সে সময় বাংলাদেশে কয়লা উত্তোলনে দক্ষ জনবল না থাকায় দক্ষ জনশক্তি দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি হয় বিসিএমসিএলের সঙ্গে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের।
ওই চুক্তি অনুসারে, এক হাজার একশ ২৭ জন বাংলাদেশি ও তিনশ ২৯ জন চীনা শ্রমিক ও কর্মকর্তা খনিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিতে একজন কর্মকর্তা, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ছয়জন কর্মকর্তা ও দুইশ নয়জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়।
সব মিলিয়ে বর্তমানে খনিতে কাজ করছেন এক হাজার ছয়শ ৭২ জন। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটিতে শূন্যপদ রয়েছে এক হাজার দুইটি।
এদিকে, শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তারা বিসিএমসিএলের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পান না। তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের সদস্য হিসেবে। ফলে, শ্রমিক স্বার্থ দেখতে চায় না বড়পুকুরিয়া কয়লা কোম্পানি।
শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি ছিল, বিসিএমসিএলের অধীনে স্থায়ী নিয়োগ, নিয়মিত ডাক্তার, নমিনিসহ বীমা পলিসি করার। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক-কর্মচারীরা এ সব দাবি আদায়ে আন্দোলন করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
একাধিকবার কয়লা উত্তোলন বন্ধ রেখে ধর্মঘটের মতো কঠোর কর্মসূচিও দিয়েছেন শ্রমিকেরা। তবে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।
অপরদিকে, নতুন করে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হলে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমেই দেওয়া হবে বলছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। ফলে, আগের মতোই থাকবে শ্রমিক অসন্তোষ।
কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ধর্মঘটের সময় তাদের আশ্বাস দিয়েছিল কোম্পানির চাকরির বিধিমালা পরিবর্তন করে বিসিএমসিএলের অধীনে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে।
এদিকে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোজাম্মেল হক খান বিক্ষোভের কারণে নিয়োগ বন্ধের কথা স্বীকার করেছেন।
এবিষয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “অনেক সময় ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করা যায় না পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে। ”
উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, “কিছুটাতো প্রভাব থাকবেই। তবে আমাদের দেশে সাধারণ জনবল কাঠামোতে সময় সময় একটু বেশি লোক নেওয়া হয়। তবে সংকট কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ”
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৩
ইএস/সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর