ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

১৭৫ মেগাওয়াটেই মুখরক্ষা মনমোহনের!

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৩
১৭৫ মেগাওয়াটেই মুখরক্ষা মনমোহনের!

ঢাকা: অবশেষে ভারত সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ পেল বাংলাদেশ। তবে অর্থের বিনিময়ে এ বিদ্যুৎ দিয়েই বাংলাদেশের কাছে নিজেদের মুখ রক্ষা করলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং।

চলতি বাজারমূল্যেই এ বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ।

অনানুষ্ঠানিকভাবে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া শুরু হলেও আগামী শনিবার ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দিন থেকে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হবে। নভেম্বর নাগাদ ভারতের আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার কথা রয়েছে। এই বিদ্যুৎ আসবে ভারতের পাওয়ার ট্রেডিং কোম্পানির কাছ থেকে।

উল্লেখ্য, পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ পাবে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর মধ্যে ২৫০ মেগাওয়াট দেবে কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশনের নির্ধারিত দামে। বাকি ২৫০ মেগাওয়াট বাংলাদেশকে কিনতে হবে ভারতের বিদ্যুতের বাজার থেকে বাজার দামে। বিপণনের ব্যবস্থা করবে ভারতের পাওয়ার ট্রেডিং কোম্পানি।

জানা গেছে, শনিবার ভেড়ামারায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দিল্লি থেকে ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বিদ্যুৎ আমদানি প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় ভারত বাংলাদেশের কাছে এই বিদ্যুৎ বিক্রি করছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ৫০ মেগাওয়াট সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে ভারত থেকে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ।

এদিকে দু’দেশের বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এই বিদ্যুৎ দেওয়াকে ``কোনো রকমে ভারতের মান বাঁচানো`` বলছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি, বাংলাদেশের মূল দাবি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়ে ভারত শুধু বিদ্যুৎ রফতানি করেই দায় মেটাতে চাইছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনে নিচ্ছে বলেই তারা এটা দিতে সমর্থ হয়েছে বলেও বিশ্লেষকদের দাবি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর আমিনা মহসীন বাংলানিউজকে বলেন, শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ রফতানি করে ভারত মুখ রক্ষাই করল বটে। এ ব্যাপারটির সঙ্গে ভারতের রাজ্যসভার অনুমতি জড়িত নয়। যেমনটি স্থলসীমান্ত চুক্তি ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সঙ্গে জড়িত। তাই কেন্দ্রীয় সরকারকে এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়নি।

তিনি বলেন, তাছাড়া সামনে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। কংগ্রেস সরকারকেও প্রতিবেশির সঙ্গে সম্পর্ক অর্জনের বিষয়টি দেখাতে হবে। সেদিক বিবেচনা করেও মনমোহন সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বিদ্যুৎ রফতানি শুরু করেছে। এর মাধ্যমে ভারত আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

একই সুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিদ্যুতের চুক্তিটি আলাদা ছিল। এটি রফতানি করার বিষয়। তাই তিস্তা বা স্থলসীমান্ত চুক্তির মতো কোনো ধরনের ঝামেলার মুখোমুখি হয় নি মনমোহন সরকার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দেওয়ায় ভারতের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বরং আয় করছে দেশটি। ভারত সরকার দেখাতে পারছে, বাংলাদেশ থেকে আয় করছে তারা। একই সঙ্গে তিস্তা বা স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন না করতে পারলেও ‘কিছু একটা দিয়েছি’ বলে শেষ সময়ে বাংলাদেশকে খুশি রাখতে পারছে।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আরো বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, আসন্ন শীতের অধিবেশনে তাদের রাজ্যসভায় স্থলসীমান্ত চুক্তির বিলটির এজেন্ডা আনবেন। এ প্রতিশ্রুতি আগেও পেয়েছি আমরা। এবার দেখা যাক কি হয়। তবে এজেন্ডা আনা মানেই সেটি পাস হওয়া নয়। বিরোধী দল এজেন্ডা আনতে বিরোধিতা না করলেও সেটি পাস করাতে সমর্থন দেবে এমনটি নয়। ভারত সরকার এখনো এ বিষয়ে বিরোধী দলের মন গলাতে পারে নি। সুতরাং ফল কি হবে সেটা খানিকটা আঁচ করাই যায়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এবং ১৯৭৪ সালে সম্পাদিত স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার। কিন্তু বিরোধী দলের বাধার কারণেই আজ পর্যন্ত তা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।

তবে বিদ্যুৎ ছাড়াও ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তির তালিকায় আছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ৪৬টি পণ্য ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রবেশের সুযোগ। যা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরকালে ঘোষণা করেন। এছাড়া ভারতের ঘোষিত ২০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদানের ১৫ কোটি ডলার অনুদানও বর্তমান সরকারের হাতে এসেছে।

২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দেশটি বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। পরবর্তী সময়ে ভারত ওই ঋণের ২০ কোটি ডলার অনুদান ঘোষণা করে। ফলে ভারতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০ কোটি ডলারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৩/আপডেট ২০ ঘণ্টা
জেপি/এএসআর/জিসিপি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।