ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

তোপের মুখে ডিপিডিসি-ডেসকো

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪১ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৪
তোপের মুখে ডিপিডিসি-ডেসকো ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়ে ভোক্তাদের তোপের মুখে পড়েছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি(ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) কর্মকর্তারা। ভুল স্বীকার করলেও অস্বাভাবিক প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেয়নি কোনো কোম্পানিই।


 
বুধবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে(বিইআরসি) কোম্পানি দু’টির গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি গ্রহণ করা হয়। সেখানে অস্বাভাবিক প্রস্তাব দেওয়ায় কর্তারা তোপের মুখে পড়েন।
 
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য সবগুলো (৫টি) বিতরণ কোম্পানি প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিইআরসিতে। ডিপিডিসি ছাড়া অন্য ৪টি কোম্পানির মধ্যে ডেসকো সর্বোচ্চ ১৫.৯০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু ডিপিডিসি সাড়ে ২৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
 
ডিপিডিসি’র প্রস্তাব নিয়ে প্রথমেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন কনুজমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম।
 
তিনি বলেন, কি কারণে এতো বেশি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি না। একই দরে ডেসকো বিদ্যুৎ কেনা-বেচা করছে। ডেসকো ১৫.৯০ শতাংশ প্রস্তাব দিয়েছে, কিন্তু ডিপিডিসি কেন এতো বেশি প্রস্তাব দিয়েছে?
 
অসামঞ্জস্যপূর্ণ এ প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান শামসুল আলম।
 
শামসুল আলমের সঙ্গে সুর মেলান, বিইআরসি’র সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ। তিনিও বিষ্ময় প্রকাশ করে ডিপিডিসি’র এমডির কাছে ব্যাখ্যা চান। জবাবে ডিপিডিসি’র এমডি নজরুল হাসান বলেন, আমি আপনাদের বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলছি না। তবে উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে নিতেই এ দাম বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
 
এরপর কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব হাসান মুন্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেক প্রশ্নেরই সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হন ডিপিডিসি’র কর্মকর্তারা। মাথা নিচু করে থেকে এড়িয়ে যান প্রসঙ্গ।
 
বিকেলে শুনানি গ্রহণ করা হয় ডেসকো’র প্রস্তাব নিয়ে। ডেসকো গড়ে কম দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও নিম্ন আয়ের গ্রাহকদের(যারা কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন)বেশি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে তোপের মুখে পড়েন।
 
ডেসকো গড়ে ১৫.৯০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ব্যবহৃত বিদ্যুতের ওপর ৩১.৭৭ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।
 
প্রস্তাবে দেখা গেছে, সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা শুধু বাল্ব এবং ফ্যান ব্যবহার করেন। তারা মাসে সর্বোচ্চ ৭৫ ইউনিট ব্যবহার করেন। তাদের ক্ষেত্রে ২০.১২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
একইভাবে ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারীর জন্য ৩১.৭৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আর ৪০০ ইউনিটের ওপরে যারা বাসায় এসি, ফ্রিজ ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে মাত্র ৬.৫২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
 
বিষয়টি নজরে আনেন সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, আপনারা নিম্ন আয়ের গ্রাহকদের বেশি আর উচ্চবিত্তদের কম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। এদিয়ে কি বার্তা দিতে চেয়েছেন, আমি বুঝি না। তবে এটুকু বলতে পারি, আপনারা বড় ধরনের ভুল করেছেন। এটি বাস্তবায়িত হলে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
 
এ সময় ডেসকো’র এমডি আরজাদ হোসেন বলেন, আসলে আমরা একটা ‍সমন্বয় করতে চেয়েছি। কারণ, বিত্তশালী গ্রাহকদের আগে থেকেই বেশি দর রয়েছে।
 
ডেসকো’র এমডি উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার জন্য দাম বাড়ানোর কথা বললে আলোচনায় অংশ নেন বিইআরসি’র চেয়ারম্যান এ আর খান। তিনি বলেন, ধরেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস একটি মাথা ব্যথার ট্যাবলেট ৫ টাকা দরে বিক্রি করে। স্কয়ার যদি আরও ২টি কারখানা স্থাপন করতে চায়, তাহলে কি ট্যাবলেটটির দাম বাড়িয়ে দেবে? না দেবে না। অতএব আপনার এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
 
গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, ডেসকো তো শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানি। আপনারা বলছেন, কোম্পানি লোকসান দিচ্ছে। কিন্তু প্রতি বছরেই শেয়ারের ডিভিডেন্ট দেওয়া হচ্ছে কেমন করে?‍
 
জবাবে ডেসকো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম বলেন, আমরা অাগের জমা থেকে দিচ্ছি। এটা ডেসকো বোর্ড চাইলে দিতে পারে। ডেসকো’র এ উত্তরের জবাবে জোনায়েদ সাকি বলেন, গ্রাহকের পকেট কেটে শেয়ারের ডিভিডেন্ট দেওয়া হচ্ছে। এটা আমরা মেনে নিতে পারি না।
 
আপনারা যদি শেয়ারের লভ্যাংশ না দিতেন তাহলে মুলধন জমতো। সে টাকা দিয়ে উন্নয়ন করতে পারতেন। তাহলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়তো না। অথচ লোকসান দিয়েও শেয়ারের লভ্যাংশ দিয়েছেন।
 
আলোচনা যখন ক্ষোভের দিকে যেতে থাকে, তখন রেশ টানেন বিইআরসি’র চেয়ারম্যান নিজেই। বলেন, বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বিইআরসি।
 
কিছুটা যখন পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে তখন সিরাজুদ্দিন নামের একজন গ্রাহক তাতে ফের ঘি ঢালেন। তিনি বলেন, ডেসকো বিদ্যুতের দাম ছাড়াও নানা রকম চার্জ আদায় করছে। প্রতিমাসেই ডিমান্ড চার্জ নিচ্ছে। এটি কেন দেবেন গ্রাহকরা?
 
ডিমান্ড চার্জের আলোচনার রেশ না শেষ হতেই আবারও বোমা ফাটান সিরাজুদ্দিন। তিনি বলেন, গ্রাহকদের থেকে ভ্যাটের ওপর সারচার্জ আদায় করছে ডেসকো। কমিশনও বিষয়টি নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে। পরে ডেসকো’র কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অনেক আগে থেকেই বিষয়টি চলে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।