ঢাকা: নির্ধারিত সময়ের ৮ মাস পর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে সামিটের মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আর বিবিয়ান-২ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও মাত্র ১০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
মেঘনাঘাট ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টটি পূর্ণাঙ্গ মাত্রায় উৎপাদনে যাবে চলতি বছরের আগস্ট মাসে। বর্তমানে সিম্পল সাইকেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। যার উৎপাদন ক্ষমতা ২১০ মেগাওয়াট। ২০১১ সালের মে মাসে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য চুক্তি সই করা হয়।
সিম্পল সাইকেল ইউনিটটি উৎপাদনের আসার কথা ছিল গত বছরের আগস্ট মাসে। কিন্তু সামিট গ্রুপের ব্যর্থতার কারণে ৮ মাস দেরিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। অনেক কাজ বাঁকি রেখেই বুধবার পরীক্ষামুলক উৎপাদন শুরু করেছে।
বিলম্ব প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিকুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, হরতাল ধর্মঘটসহ নানা রকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারনে বিলম্ব হয়েছে। হরতাল-ধর্মঘট না হলে নির্ধারিত সময়েই উৎপাদনে আসত।
প্রধানমন্ত্রীর সময় পাওয়া গেলে সেদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন তারিকুর রশিদ।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মালিকানা থাকবে সামিটের হাতে। ডুয়েল ফুয়েল(গ্যাস ও তেল) নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গ্যাস দিয়ে পরিচালিত হলে সরকার ৩.১২ টাকা দরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে।
অন্যদিকে সামিট গ্রুপের সঙ্গে ২০১১ সালের ১২ মে বিবিয়ানা-২ ও বিবিয়ানা-১ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি করা হয়। বিবিয়ানা-২ এ ৩৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির গত জানুয়ারি মাসে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র ১০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এখনও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টারবাইনসহ অনেক যন্ত্রপাতি আনতে পারেনি সামিট গ্রুপ।
আর বিবিয়ানা-১ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন শুরুর কথা ছিল ২০১৩ সালের আগস্টে। কিন্তু মেয়াদ গড়িয়ে গেলেও কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয় সামিট।
আইনানুযায়ী নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হলে চুক্তি বাতিল ও তাদের জামানত ২৪ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু নজিরবিহীনভাবে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু তারপরও কাজ শুরু করতেই ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি।
অবশেষে কঠোর সমালোচনার মুখে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সামিটের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, জামানত বাজেয়াপ্ত না করে সামিটকে ছাড় দিতে একটি গ্রুপ উঠে পড়ে লেগেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শেই সামিটকে মামলা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। সামিট গ্রুপকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষে দুর্বল তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হবে। যাতে সামিট গ্রুপ সহজেই মামলায় জয়ী হয়ে তাদের জামানত ২৪ কোটি টাকা ফেরৎ পেতে পারে।
সামিটের এই ঢিলেমির পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে- এসব বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র যথাসময়ে উৎপাদনে এলে কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার প্রয়োজন পড়বে না।
তখন কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে দিতে পারবে সরকার। আর তাতে সামিটসহ কুইক রেন্টাল সিন্ডিকেটের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কুইক রেন্টালের নামে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে তারা এই হীন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৪