ঢাকা: বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা অফিস করার চেয়ে বিদেশ সফরে বেশি মনোযোগী। কর্মস্থলে তাদের অনুপস্থিতির কারণে ব্যহত হচ্ছে উন্নয়ণ কর্মকাণ্ড।
বিষয়টি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত গড়িয়েছে। ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী কোন কর্মকর্তা কতোদিন ধরে বিদ্যুৎ বিভাগে রয়েছেন, আর কে কতোবার বিদেশ সফর করেছেন, সেই তথ্য জানতে চেয়েছেন।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত ২৯ মে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ওই চিঠি বিদ্যুৎ বিভাগে পৌঁছেছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তথ্য সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ওই চিঠি নিয়ে নানা রকম জল্পনা-কল্পনাও শুরু হয়েছে। অনেকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সঠিক পথেই রয়েছেন। তিনি যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তাহলে বিদ্যুৎ বিভাগ রাহুমুক্ত হবে। আবার বিদেশ সফরে উৎসাহীরা নিজেকে রক্ষার জন্য তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের অনেক কর্মকর্তা বিদেশ সফরে কোনো আইন-কানুন মানছেন না। কর্মস্থল ত্যাগ করার আগে বদলি দায়িত্ব দিয়ে যাওয়ার বিধান থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা পালন করা হচ্ছে না। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে।
বিদেশ সফরের শীর্ষে রয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) আনোয়ার হোসেন। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা এ কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি না থাকলেও বিদেশ সফর রয়েছে সবার ওপরে।
তিনি কখন দেশে আর আর কখন বিদেশে রয়েছেন তা বুঝে ওঠার জো নেই। ২০০৮ সালের জুনে বিদ্যুৎ বিভাগে যোগদানের পর থেকে প্রায় ৩৫ দফায় ১৭০ দিন বিদেশ সফর করেছেন তিনি।
কয়েকদিন আগে জার্মানি থেকে ফিরে এসেছেন আনোয়ার হোসেন। রোববার আবার ৪ দিনের সফরে সিঙ্গাপুরে গেছেন। এবার যাওয়ার সময় কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাননি। যে কারণে তার দফতরের সব ফাইল আটকে আছে।
বিদেশ সফরে থাকায় অনেক চেষ্টা করেও আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়, যাতে তারা দেশে ফিরে উন্নত দেশের প্রযুক্তি ও জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন। আর এ জন্য অপেক্ষাকৃত তরুণদের সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের নামে বিদেশ সফরে এসব নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাই দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন সামনের কাতারে। আর বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে তারা কোনো প্রতিবেদনও জমা দেন না। ফলে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে ওই সব প্রশিক্ষণের নামে বিদেশ ভ্রমণ দেশের কোনো কাজে আসছে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) পদে দায়িত্ব নিয়ে ২০০৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন ফয়েজ আহমেদ। এরপর ১৭ বার তিনি বিদেশ ভ্রমণ করেন। এর মধ্যে স্পেনে দুবার ও জার্মানিতে একবার বিদেশ ভ্রমণের অর্থ দিয়েছে আইসোলেক্স স্যামসাং। খুলনা ১৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য সেখানে যান তিনি।
জানুয়ারি পর্যন্ত উপ-সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বিদ্যুৎ বিভাগে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট। এ পর্যন্ত তিনি ২০ বার বিদেশ সফর করেছেন। চলতি বছরেই তিনি পাঁচবার বিদেশ সফর করেছেন।
এছাড়া যুগ্ম সচিব মো. নজরুল ইসলাম ১৬ বার, উপ-সচিব এ কে এম হুমায়ূন কবীর ১৭ বার, উপ-সচিব মো. ফারুকুজ্জামান ১২ বার, উপ-সচিব শেখ শোয়েবুল আলম ছয়বার, সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর ১৪ দফায় বিদেশ সফর করেছেন।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রবণতা রয়েছে। যেসব বিষয়ে তারা প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ সফরে যান অধিকাংশ সময় দেশে ফিরে ওই সব বিষয়ে তারা কোনো কাজ করেন না। ফলে তাদের ওই সফর থেকে দেশ উপকৃত হয় না। বিদেশ সফরকে একটি সিস্টেমের মধ্যে আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৪