ঢাকা: দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১০হাজার মেগাওয়াটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গত বছরের নভেম্বরে। মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তখন আলোক উৎসব পালন করা হয়েছিলো।
তার ঠিক আট মাসের মাথায় এসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আসন্ন রমজানে ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। তাই এড়ানো যাবে না লোডশেডিং। তবে সেহরি, ইফতার ও তারাবির নামাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায় সরকার। এ জন্য ১৫ রমজান পর্যন্ত রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে দোকান বন্ধ ও ইফতারের সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ থাকছে আলোক সজ্জাও।
আসন্ন রমজানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান আব্দুহু রুহুল্লাহ এমন তথ্য তুলে ধরেন। তার এই বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে গত ৮ মাসের উন্নতি কি? না-কি বিদ্যুৎ বিভাগ উল্টো পথের যাত্রী হয়ে পড়েছে।
সভার কার্যবিবরণীতে বিপিডিবি চেয়ারম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়েছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্থাপিত ক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার ৫৬১ মেগাওয়াট। কিন্তু প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৬ হাজার ৮১৮ মেগাওয়াট।
উৎপাদন কম প্রসঙ্গে তার ব্যাখ্যা হচ্ছে, ডিরেটেড ক্ষমতা ৯ হাজার ৯৪৭ মেগাওয়াট, অবসর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ১ হাজার ১৯৫ মেগাওয়াট, গ্যাস সরবরাহ জনিত উৎপাদন ঘাটতি ৮৮২ মেগাওয়াট, পানি স্বল্পতার কারণে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাইয়ে উৎপাদনে ঘাটতি ১৩২ মেগাওয়াট ও ভারত থেকে ১৬২ মেগাওয়াট কম পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, জুনের মধ্যে ঘোড়াশালের ১০৮, গগণনগরের ১০২ ও সিরাজগঞ্জের ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। তাই আশা করা যাচ্ছে রমজান মাসে ৭ হাজার মেগাওয়াটের উপরে উৎপাদন ক্ষমতা থাকবে।
তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসমূহ একটানা চালানো যাবে না। মাঝে মাঝে অবসর দিতে হবে। এ জন্য রমজান মাসে দিনের বেলা কিছু লোডশেডিং করা প্রয়োজন হবে।
ওই সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়েছে, দেশে গ্যাস উৎপাদন বাড়লেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বাড়েনি। গত বছর মে মাসে দৈনিক ১ হাজার ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পাওয়া গেলেও এ বছর পাওয়া গেছে গড়ে ৯’শ মিলিয়ন ঘনফুট।
গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করে রমজানের পুর্বেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সমূহের প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ ও মেরামত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য একটি স্পেশাল টিম গঠন ও রমজানে ইফতার ও সেহরিতে লোডশেডিং না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিপিডিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অনেক বিষয়েই স্ট্যান্টবাজি হয়। ধরে নেন সে রকমই বিষয়টি।
সাধারণত একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইফ টাইম ধরা হয় ১৫ বছর। সেখান থেকে বাড়িয়ে ২৫ বছর করা হয়েছে। কিন্তু ভেড়ামারা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বয়স চলছে ৩৭ বছর। প্রতি ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদনের খরচ পড়ছে ৩২ টাকার মতো। যোগফল বাড়াতে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধরে রাখার কোনই মানে হয় না।
তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়নের স্বল্পমেয়াদী ও মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। স্বল্প মেয়াদে ছিলো রেন্টাল কুইক রেন্টাল। যেগুলো যাচ্ছেতাই ভাবে বসানো হয়েছে। নেই কোন মনিটরিং। অন্যদিকে মধ্যমেয়াদী প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
কর্মকর্তারা বলেছেন, অনেক অনভিজ্ঞ ও অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ না করে বসে আছে। বাতিল করে অন্য কাউকে দেওয়া যাচ্ছে না, আবার তারা নিজেরাও করছে না।
বিপিডিবির চেয়ারম্যান আব্দুহু রুহুল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামত করা হচ্ছে। সে কারণে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে।
রমজানে বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করতে বলা হয়েছে। কোথাও যান্ত্রিক সমস্যা সৃষ্টি হলে দ্রুত তা সারানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য ট্রলি ট্রান্সফরমার প্রস্তত রাখতে হবে। কোথাও ট্রান্সফরমার বিকল হলে তা লাগিয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক করে মূল ট্রান্সফরমার ঠিক করতে বলা হয়েছে।
এখন দেশে বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে (সান্ধ্যকালীন) সাত হাজার ২০৬ মেগাওয়াট। প্রাথমিক ব্যবহার এবং সঞ্চালন ক্ষতি বাদ দিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে ছয় হাজার ৫৩৬ মেগাওয়াট।
রাজধানীতে গরম বেশি পড়লে দিনে রাতে অন্তত দুই ঘন্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্রামে এখনও আট থেকে ১০ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা বলেছেন চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশ সরবরাহ পাচ্ছেন তারা। সে হিসেবে ৮ ঘণ্টা লোডশেডিং হওয়ার কথা।
তবে রমজানের সময় যাতে নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ থাকে সরকারের পক্ষ থেকে ওই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য সন্ধ্যায় ও গভীর রাতে শিল্পকারখানার আংশিক বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে সিএনজি স্টেশনে গ্যাস রেশনিং বলবৎ থাকছে। যে কারণে রমজানে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর।
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, জুন ২৯ ২০১৪