মুন্সীগঞ্জ: রমজান মাস শুরু হতে না হতেই মুন্সীগঞ্জে তীব্র গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে রান্না-বান্না নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন গৃহিণীরা।
গ্যাস সঙ্কটে পড়ে তারা এখন গ্যাসের চুলা ছেড়ে রান্না করছেন খড়ি বা কেরোসিনের চুলায়। আবার অনেকেই মধ্যরাতে রান্না করে পরবর্তী দিনের জন্য রেখে দিচ্ছেন।
ফলে গ্যাস গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এছাড়া গত কয়েক বছর ধরেই রমজানের শুরুতে এভাবে গ্যাস সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এতে শহরসহ আশপাশের হাজার পরিবার দুর্ভোগে পড়লেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
এদিকে, গ্যাসের দাবিতে মুন্সীগঞ্জবাসী একাধিকবার মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিসহ আন্দোলনে রাজপথে নামলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এখন মুন্সীগঞ্জবাসীর কাছে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই গ্যাস সঙ্কট।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত মোটামুটি গ্যাস পাওয়া গেলেও দিনের বেলায় গ্যাসের অভাবে চুলা জ্বালাতে পারছে না গৃহিণীরা। তাই তারা রাতের ঘুম হারাম করে দিনের রান্না আগের রাতে সেরে রাখছেন।
এছাড়া রমজান মাসে রোজা রেখে প্রতিদিন বিকেলে ইফতার, সেহরী ও রাতের খাবার তৈরি করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
শহরের মধ্য কোটগাঁও এলাকার চাকরিজীবী গৃহিণী জান্নাতুল ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানান, রোববার প্রথম রোজা রাখার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে গ্যাস সঙ্কটের কবলে পড়তে হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাসের অভারে সেহরীর খাবার রান্না করতে চুলা জ্বালানো সম্ভব হয়নি। পরে কিছুটা গ্যাস পাওয়া গেলে নিভু নিভু আকারে চুলা জ্বালিয়ে রান্না করতে হয়েছে।
তার মতো কোটগাওঁ এলাকার প্রতিটি পরিবারের গৃহিণীদের একই রকম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাসের এক ঠিকাদার জানান, শিল্প কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বেশী দেওয়ায় বাসা বাড়িতে গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকটি শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিলে এ সঙ্কট থাকতো না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ঠিকাদার মনে করেন।
স্থানীয় তিতাস গ্যাস অফিস সূত্র জানায়, মুন্সীগঞ্জে গ্যাসের চাহিদা ৫ দশমিক ২৫ এমএমসিএম (মিলিয়ন ঘন মিটার)। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে কত মিলিয়ন ঘন মিটার তা জানা নেই কর্তৃপক্ষের। মুন্সীগঞ্জে আবাসিক প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ও ৪৫টি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের সংযোগ রয়েছে।
তিতাস গ্যাসের মুন্সীগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আরমানুর রেজা জানান, এক লাইনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সঙ্কটের অন্যতম কারণ। নারায়ণগঞ্জের চাহিদা মেটানোর পর পাইপ লাইনের গ্যাস না থাকায় মুন্সীগঞ্জের গ্রাহকরা গ্যাস পাচ্ছেন না বলে তিনি জানান।
এছাড়া আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানায় চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় মুন্সীগঞ্জে গ্যাস সঙ্কট আরও প্রকট হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ বিষয়টি মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃনাল কান্তি দাস পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে অবহিত করার পর বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক সভায় মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ দফতর সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস গ্যাস সঙ্কটের কারণে কানসাটের মতো মুন্সীগঞ্জের মানুষও ফুসেঁ উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৪