ঢাকা: কয়লা উত্তোলনের কোনো উদ্যোগই নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক সভায় বলেছেন দেশীয় কয়লা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে দেওয়া হবে।
অথচ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি) মাস্টারপ্লানে বলছে দেশীয় কয়লা দিয়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
আর তারই ভিত্তিতে চলছে ঘরে ঘরে মানসম্মত বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার মহাপরিকল্পনা। সমাল তালে চলছে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে পিডিবির এই পরিকল্পনাকে স্বপ্ন বিলাসী মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে বছরে প্রায় ৩৬ মিলিয়ন টন কয়লা প্রয়োজন পড়বে। বর্তমানে দেশের একমাত্র বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে বছরে মাত্র এক মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন ‘দেশীয় কয়লা ক্ষেত্র সমুহ হতে কয়লা উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ অতীব জরুরি’।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজেও স্বীকার করেছেন। কয়লা উত্তোলনে এখনই পদক্ষেপ নিতে না পারলে সংকট তৈরি হতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরাতো কয়লা তুলতেই চাই। কয়লা উত্তোলন করতে পারলে দেশের চেহারা পাল্টে যেতো। কিন্তু তুলতে গেলেই একটি মহল বাঁধার সৃষ্টি করছে। তারা চায় বিদেশ থেকে নিম্নমানের কয়লা আসুক।
পিডিবির মাস্টার প্লানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এরমধ্যে কয়লা দিয়ে ২০হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। দেশীয় কয়লা দিয়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট ও আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। একে কাগুজে পরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করেছেন অনেকে।
দেশের কোন খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করতে হলে শুরুর দিন থেকে কমপক্ষে ৫ বছর সময় প্রয়োজন। এর বাইরে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রসঙ্গ।
রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের আলোচনা শুরু হয় ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময়ে। এরপরেই উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৫ বছর পার হয়ে গেছে প্রাথমিক স্তরেই। এখন পর্যন্ত প্রকল্প সাইটে মাটি ভরাট কাজেই শেষ হয় নি। ২০১৯ সালের আগে সেখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনাক্ষীণ।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে আদর্শ ধরা হলে একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পেতে কমপক্ষে ৯ বছর সময় প্রয়োজন। সেখানে পিডিবি মনে মনে হিসেবে কষছে ২০৩০ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে কয়লা দিয়ে। যার জন্য দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
দেশে ৫টি কয়লা খনির মধ্যে শুধুমাত্র দিনাজপুরের বড়ুপুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। অন্যগুলো নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্তের অভাবে ঝুলে রয়েছে। আর কয়লা নীতি প্রণয়ন নিয়ে লুকোচুরি চলছে ২০০৪ সাল থেকে। চলছে রিভিউ এর পর রিভিউ। কিন্তু চূড়ান্ত করা হচ্ছে না সেই নীতিমালা।
সরকারি হিসেব মতে, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ি, জয়পুর হাটের দীঘিপাড়া, রংপুরের খালাশপীর এবং বগুড়ার কুচমায়সহ পাঁচটি কয়লা খনি আবিস্কৃত হয়েছে। এসব খনিতে মজুদ রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩’শ মিলিয়ন টন উন্নতমানের কয়লা।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির বাদ দিলে আর বাকি থাকে ৪টি ক্ষেত্র। এরমধ্যে ফুলবাড়ি কয়লাখনির কাজ পেতে চায় এশিয়া এনার্জি। যে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর রয়েছে চরম অসন্তোষ। কোন ভাবেই এশিয়া এনার্জিকে সহ্য করতে চায় না তারা। ফুলবাড়ি থেকে কয়লা তুলতে যাওয়া আর অগ্নিশিখার মুখে বুক পেতে দেওয়া সমান বলে মনে করছে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। দিঘীপাড়া কয়লা খনির কাজ নিয়ে বসে আসে পেট্রোবাংলা।
তবে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে খালাশপীর কয়লা খনি। এখান থেকে আন্ডারগ্রাইন্ড মাইনিং পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে চায় সমীক্ষাকারি কোম্পানি হোসাফ কনসোটিয়াম লি। এই নিয়ে খুব বেশি সমালোচনা নেই।
২০০৩ সালে সরকারের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে হোসাফ কনসোর্টিয়াম ও চায়নার সেন উইন মাইনিং গ্রুপকে খালাশপীর কয়লা খনি সমীক্ষার জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
হোসাফ কনসোর্টিয়াম এবং সেন উইন মাইনিং গ্রুপ ট্রপোগ্রাফিক্যাল সার্ভে এবং দ্বি-মাত্রিক ও ত্রি-মাত্রিক সিসমিক সার্ভে করে। ওই সার্ভের মাধ্যমে কয়লার মজুদ, পুরুত্ব,গভীরতা, চ্যুতি ও কয়লার বিস্ততি এবং স্তর সম্পর্কে পরীক্ষা চালায়। হোসাফ ২০০৬ সালে খনি উন্নয়নের আবেদন করে। কিন্তু সেই প্রস্তাব এখনও ঝুলে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৪