ঢাকা: ঈদ নিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রীর যখন নির্ঘুম রাত কাটছে, ঠিক তখন নিশ্চিতে ঘুমাচ্ছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্ঘুম রাতের কারণ দেশের সবার জানা।
বাংলানিউজকে এই প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এতোদিন রমজান নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এখন স্বস্তিতে ঘুমাচ্ছি। ঈদের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। কোনো সমস্যা হবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, অতীতের যে কোনো বছরের তুলনায় এবার রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি অনেক ভালো ছিলো। ইফতার সেহেরিতে কোনো লোডশেডিং ছিল না। সাধারণ জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নি। ঈদেও বিদ্যুতের সংকট থাকছে না। জনগণ শান্তিতে ঈদ করতে পারবেন।
ঈদে লোডশেডিংমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোথাও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে দ্রুত সারানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ট্রলি ট্রান্সফরমার প্রস্তত রাখতে বলা হয়েছে।
কোথাও ট্রান্সফরমার বিকল হলে তা দ্রুত লাগিয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক করে মূল ট্রান্সফরমার ঠিক করতে নির্দেশনা রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো সমস্যা নেই। যতটুকু প্রয়োজন উৎপাদন করা হবে। তবে কিছু কিছু এলাকায় ওভার লোডেড ট্রান্সফরমার রয়েছে। সেখানে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।
তবে সরকার মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কাজ করছে। জনগণকে আরও কিছুটা সময় দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন নসরুল হামিদ।
সারা বছর টানা পোড়েন থাকলেই ঈদের দিনগুলোতে স্বস্তিতে থাকে এই সেক্টরের লোকজন। শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের চাহিদা অনেক কমে যায়।
তিনি বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে সারা বছরেই বিদ্যুতের উৎপাদনে ঘাটতি থেকে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে গ্যাসের ঘাটতির কারণে কমবেশি ৯’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়। যে কারণে ঘাটতি মোকাবেলায় ব্যয়বহুল তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানো হয়। সে দিক থেকেও স্বস্তি বয়ে আনে ঈদ।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, শিল্প কারখানা বন্ধ থাকা এবং লোকজন রাজধানী ছাড়ার কারণে গ্যাসের চাহিদা অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে।
তিনি জানান, সাধারণত দৈনিক ২ হাজার ৮শ’ এমএমসিএফ গ্যাস চাহিদা থাকে। কিন্তু ঈদের সময় ১ হাজার ৪শ’ এমএমসিএফ’এ নেমে আসে। গ্যাসতো আর রিজার্ভ করে রাখা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়।
সারা বছর নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের কারণে গ্যাস উত্তোলনের মেশিনগুলোর সাধারণ সার্ভিসিং করা যায় না। ঈদের সময় চাহিদা কম থাকায় এই সুযোগে সাধারণ সার্ভিসিং করা হয় বলে জানান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালক অপারেশন বাংলানিউজকে জানান, এ বছর বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র মেইনটেইন্সের জন্য বন্ধ থাকছে। দু’দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ হয়ে আসছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ২৩শ’ এমএমসিএফডি গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। যার মধ্যে বিবিয়ানা থেকে ৮২৫ এমএমসিএফডি গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের চাহিদাও অনেক কমে যায়। সাধারণত পিক আওয়ারে (বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা) ৮ হাজার মেগাওয়াটের মতো চাহিদা থাকে। এলাকা ভিত্তিক শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় চাহিদা মিনিমাইজ করা হয়। এতে সাড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো চাহিদা থাকে।
ঈদের সময় এক চতুর্থাংশ চাহিদা কমে যাবে। ঈদের ছুটির সময়ে কমবেশি ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে। সে সময়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
১৮ জুলাই রাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড করা হয়। এদিন ৭ হাজার ৪১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ওই সময়ে কোনো লোডশেডিং ছিলনা বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৪