ঢাকা: লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। কিন্তু তারপরও অপ্রয়োজনে কনসালটেন্ট নিয়োগ সংস্থাটিকে ন্যুজ্ব করে ফেলছে।
রুগ্ন এ প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণাঙ্গ জনসংযোগ পরিদফতর রয়েছে। কিন্তু তারপরও একজন অখ্যাত সাংবাদিককে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়ায় কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরইবি’র জনসংযোগ পরিদফতরে একজন পরিচালক, দু’জন সহকারী পরিচালক, দু’জন উপ-পরিচালক, লাইব্রেরিয়ানসহ মোট ১৪ জন স্টাফ রয়েছেন। কিন্তু তারপরও একটি অখ্যাত পত্রিকার সম্পাদক তালুকদার রুমিকে মিডিয়া কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার কোনোই প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
বিশাল আকারের জনসংযোগ পরিদফতরেরই কোনো কাজ নেই। তারপরও তালুকদার রুমিকে কনসালটেন্ট নিয়োগ দিয়ে বসে বসে বেতন দেওয়া হচ্ছে সংস্থাটির তহবিল থেকে। ২০১২ সালে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরইবি’র পরিচালক (মানবসম্পদ বিভাগ) বহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তালুকদার রুমিকে মাসে ২০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয় আরইবি থেকে। জনসংযোগ পরিদফতর সব কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না জন্যই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তবে জনসংযোগ পরিদফতরের সাবেক পরিচালক তোরাব আলী আকুঞ্জি বাংলানিউজকে বলেন, আমিতো এর কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখি না। তারপর কর্তৃপক্ষ কেন নিয়োগ দিয়েছে তারাই ভালো বলতে পারবে।
তালুকদার রুমির নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি তার কার্যক্রম নিয়ে রয়েছে তুমুল বিতর্ক। তালুকদার রুমি পাঞ্জেরি নামের একটি অখ্যাত পত্রিকার সম্পাদক। যেটি এখনও মিডিয়াভুক্ত হতে পারেনি গোয়েন্দা বাহিনীর নেগেটিভ রিপোর্টের কারণে। পত্রিকাটি সরকারের বিষোদগারে ভরপুর থাকে।
বিএনপির সক্রিয় কর্মী তালুকদার রুমি রয়েছেন কাফরুল থানা কমিটিতে। ছাত্রজীবনে মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্রদলের এজিএস ছিলেন (১৯৯৪-৯৫)। মহানগর ছাত্রদলের আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে থেকে ছাত্র রাজনীতি ছাড়েন। এরপর মুলদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
বিএনপির প্রত্যেক কর্মসূচিতে তাকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। সর্বশেষ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে দু:স্থদের খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে অগ্রভাগে দেখা গেছে। বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মীকে আরইবিতে কনসালটেন্ট নিয়োগ দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে আরইবি’র চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার মঈন উদ্দীন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তিনিতো আপনাদের জাতি ভাই। কিছু সুবিধা পেলে আপনাদের একজন জাতি ভাইই পেয়েছেন।
তালুকদার রুমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন, আমি প্রতিষ্ঠানের কাজের সঙ্গে রাজনীতি মেলাই না। যখন রাজনীতি তখন রাজনীতি, আর কাজের সময় কাজ। মিরপুর বাঙলা কলেজে ছাত্রদল থেকে এজিএস থাকার কথাও স্বীকার করেন।
দুর্নীতি অনিয়ম এবং তদ্বিরবাজির অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, আমি অনেকবার চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু তিনি আমাকে ছাড়তে নিষেধ করেছেন।
বিদ্যুৎ দাম বৃদ্ধির বিষয়ে গণশুনানিতে একাধিকবার আরইবি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। ৭২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে মাত্র ৭টি মুনাফা করছে। অন্যগুলো লোকসানে রয়েছে। যে কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রয়োজন। সে মোতাবেক দামও বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর সঙ্গে এসব জনবলের বেতন-ভাতাও কষা হচ্ছে। যার কারণে পল্লীর জনগণের বিদ্যুতের মূল্যই বেশি ধার্য করা হয়েছে।
আরইবি নয়, এবার বিদ্যুৎ বিভাগও মিডিয়া উইং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে একটি পূর্ণাঙ্গ জনসংযোগ পরিদফতর থাকার পরও এ ধরনের মিডিয়া উইং গঠনের সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে। এতে শুধু অপচয়ই বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাওয়ার সেলের পরিচালক (বাণিজ্যিক) এম আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আমি শুনেছি, এ ধরনের একটি আলোচনা। তবে কি পর্যায়ে রয়েছে বলতে পারবো না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৪