বগুড়া: বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ণ বোর্ডে (বিআরইবি) ব্যাপক ধ্বংসাত্মক ও নাশকতার আশঙ্কা করছে খোদ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইতোমধ্যেই জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশের সবগুলো (৭২টি) কার্যালয়ে সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ও জেনারেল ম্যানেজারকে এ সংক্রান্ত চিঠিও পাঠিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন।
এদিকে, চিঠি পেয়ে সুসংগঠিত হয়ে উঠছে বিআরইবি’র কর্মরত শ্রমিকরা। চেয়ারম্যানের দেওয়া চিঠি অনুযায়ী জেনারেল ম্যানেজাররা যদি কোনো কর্মচারীকে বরখাস্ত করে, বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাদের কাউকে আটক করে তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
অপরদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এ বিষয়টির দিকে গুরুত্ব সহকারে নজর রাখছেন। তবে এখনই গ্রেফতারে না গেলেও স্থানীয় জেলা পর্যায়ের পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সহযোগিতার কোনো চিঠি দিলে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশ বিভাগের।
১৪ আগস্ট লেখা বিআরইবি’র চেয়ারম্যানের দপ্তরাদেশ (স্মারক নম্বর ২৭.১২.৬৬৩৭.০০১.০০.০০৪.১০.৩১১) সূত্রে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর হাসনাবাদ ওষুধ ফ্যাক্টরির সামনে রোমা-ঝুমা কমিউনিটি সেন্টারে সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে একটি সভা আহ্বান করা হয়। এতে নরসিংদি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এনায়েত হোসেন (এলটি), বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মোতালেব হোসেন (এলটি), ঢাকা পল্লী বিদ্যুতের মো. মান্নান (এলটি), নওগা পল্লী বিদ্যুতের আব্দুল মান্না (এলটি), সিলেট পল্লী বিদ্যুতের মিয়া মো. মামুনসহ (লাইন ম্যান, গ্রেড-২) দেশের বিভিন্ন জেলার ১৭ জন কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে গতিবিধি লক্ষ্য এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক বিষয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন নিয়ে আন্দোলনরত এসব কর্মচারীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সরকার ইতোমধ্যেই অবগত হয়েছেন, বিধায় যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও সিলেট পল্লী বিদ্যুতের মিয়া মো. মামুন (লাইন ম্যান, গ্রেড-২) বাংলানিউজকে জানান, ঢাকায় রোমা-ঝুমা কমিউনিটি সেন্টারে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে আলোচনায় যোগ দেওয়ার কারণে তাকে রাষ্ট্রবিরোধী ও দাপ্তরিক পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে কারণ দর্শানোর (শো-কোজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সিলেট-২ এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিতে, কেন তার (মামুনের) বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম শীর্ষ নেতা বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন এবং বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক কর্মচারী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী বাংলানিউজকে জানান, দেশে ৭২টি পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক তাদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রতিষ্ঠানকে ভালবাসে। তারা কখনও পল্লী বিদ্যুতের ক্ষতি চায়নি, ভবিষ্যতেও চাইবে না।
প্রায় ১৭শ’ শ্রমিক-কর্মচারী নিয়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে আলোচনা করাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান মহোদয় তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে দেশের সবগুলো জেলায় এ ধরনের অপ-প্রচার চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতর সৃষ্টি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মোতালেব বলেন, অহেতুক কোনো অপরাধ না করে যদি তাদের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়, বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে কাউকে গ্রেফতার করানো হয়, তাহলে সারা দেশে শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাই নয়, যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য পল্লী বিদ্যুৎ চেয়ারম্যানই দায়ী থাকবেন।
বিআরইবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, ইতোমধ্যেই আন্দোলন কর্মচারীরা বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসাত্মক বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৪