ঢাকা: সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প থেকে ১২১ কোটি ৮২ লাখ টাকা ফেরত যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকে।
মূল ডিপিপি’তে উপকেন্দ্রটি একটি রেগুলার স্টেশন হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল।
প্রথমদিকে, প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৪৩ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ৩৪৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্যের জন্য সংস্থান রেখেছিল।
এ অর্থ থেকে প্রকল্পের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরডিপিপি) ২৭ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২২২ কোটি ৪১ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। এতে করে প্রকল্প থেকে ১২১ কোটি ৮২ লাখ টাকা বিশ্বব্যাংকে ফেরত যাবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নতুন করে আবারও প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে। তবে কমছে প্রকল্প ব্যয়। অর্থ কমে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৩০০ কোটি ৫১ লাখ। আর প্রকল্পের মেয়াদ আগস্ট ২০০৯ থেকে বেড়ে জুন ২০১৫ সাল নাগাদ করার প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
প্রস্তাবটি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ওঠানো হবে।
প্রকল্পটির উদ্যোগী বিদ্যুৎ বিভাগ। এটি বাস্তবায়ন করছে, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)। নানা কারণে প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটি বিগত ২৫ আগস্ট ২০০৯ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।
এর মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল, ৩৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল আগস্ট ২০০৯ থেকে ডিসেম্বর ২০১১ সাল নাগাদ। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০১৩ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। কিছুদিন না যেতেই প্রকল্পের মেয়াদ ২য় বারের মতো জুন ২০১৪ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করে।
সূত্র জানায়, চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নানা কারণে প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের টাকা খরচ করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে অন্যতম আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনটি (প্যাকেজ-১) বিদ্যমান মাতুয়াইল-মানিকনগর ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন অপসারণ করে একই রাইট অব ওয়েতে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল।
ঢাকা শহরের উপকণ্ঠে নতুন রাইট অব ওয়ে পাওয়া যাবে না বিধায় পুরনো রাইট অব ওয়ে ব্যবহার করে লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
কিন্তু, লাইনটির সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ডেমরার কোনাপাড়া পর্যন্ত ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার অংশ অত্যন্ত ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা। এর ফলে, এলাকাবাসী তাদের মূল্যবান জমিতে নির্মিত ভবনগুলোর উপর দিয়ে লাইন নির্মাণে বাধা দিচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জনপ্রশাসনের সহায়তায় আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় লাইনটির নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এর ফলে লাইনটির এ অংশের জন্য রুট পরিবর্তন করে লাইনটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ডিএনডি খালের (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) পাড় ঘেঁষে করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়া খাল বরাবর পাড়ে ডিপিডিসি’র বিদ্যমান ১৩২ কেভি লাইন অপসারণ করে একই রুটে নির্মাণ করতে হয়।
এদিকে, মানিকনগর ২৩০/১৩২ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ২৩০/১৩২ কেভি এআইএস উপকেন্দ্র প্যাকেজ দুটির মূল্য হ্রাস পাওয়ার কারণেও প্রকল্প ব্যয় কমেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৪৫ ভাগই বৃহত্তর ঢাকার বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যবহত হয়। ঢাকা শহরের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণের ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও দ্রুত বেড়েই চলেছে। এ ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন নির্ভরশীল ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে।
দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সিদ্ধিরগঞ্জে ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। এছাড়া উৎপাদিত বিদ্যুতের একটি বড় অংশ দ্বারা ঢাকা শহরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এ লক্ষ্যে আলোচ্য ‘সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন’ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৪