আশুলিয়া (ঢাকা): শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে তীব্র গ্যাস সংকটে পড়েছে বৈধ সংযোগধারীরা। ফলে শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে চলা তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে চুলায় আগুন জ্বলছে না।
ফলে এ এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ শ্রমজীবী লোকসহ অন্যরা চরম বিপাকে পড়েছে। শ্রমজীবীরা সকালে রুটি-কলা ও চিড়া-মুড়ি খেয়ে কাজে যোগ দেয়, আবার কাজ শেষে বাসায় এসেও গ্যাস সংকটের কারণে না খেয়ে ঘুমাতে যায়। একই সমস্যায় পড়ে স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরাও।
এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে না খেয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে বলে অনেক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঘটছে ঝগড়া বিবাদের ঘটনা। এই ঝগড়া বিবাদের শেষ পরিণতি ঠেকেছে মৃত্যু পর্যন্ত।
সোমবার সকালে গ্যাস সংকটের কারণে আশুলিয়ার জিরাবো নামাপাড়া এলাকার ইব্রাহিমের বাড়িতে রান্না করতে দেরি হওয়ায় গার্মেন্টস কর্মী নুরুল ইসলামের সাথে স্ত্রী রহিমা আক্তারের ঝগড়া হয়। পরে স্বামীর সাথে অভিমান করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন রহিমা।
একই কারণে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পারিবারিক কলহ বৃদ্ধিসহ গৃহিণীদের মারধরের ঘটনা ঘটছে বলেও জানা গেছে।
সরেজমিনে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ভাদাইল, পবনারটেক, জিরানি, বুড়ির বাজার, গাজিরচট, বেরণ, মানিকগঞ্জপাড়া, নরসিংহপুর, জিরাবোসহ বেশিরভাগ এলাকায় দিনে ২ ঘণ্টাও গ্যাস থাকে না বলে জানায় স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়ায় অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগের বৃদ্ধির ফলে এ সংকট দেখা দিয়েছে। শিল্প এলাকায় এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে জাতীয় সম্পদ চুরির পাশাপাশি অবৈধ সংযোগের ক্ষেত্রে নিন্ম মানের পাইপ ব্যবহার করায় বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এসব অবৈধ গ্যাস লাইন তুলে দেওয়ার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না তিতাস কর্তৃপক্ষ।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, তিতাস গ্যাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এক শ্রেণির দালাল এসব অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগের মাধ্যামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে এই অবৈধ সংযোগের ফলে বৈধ সংযোগধারীরাও গ্যাস সংকটে পরে এর কুফল ভোগ করছে।
এখনও শিল্প এলাকার অনেকে জানায় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় গ্যাস সংকট বেড়েই চলেছে।
তবে বৈধ গ্যাসের সংযোগধারীরা জানায়, গ্যাস সংকট সৃস্টি হওয়ায় ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছাড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
একদিকে বৈধ গ্যাস সংযোগধারীদের মাসে মাসে বিল দিতে হচ্ছে ঠিকই। তবে অবৈধ গ্যাস সংযোগকারীদের কোনো বিল দিতে হচ্ছে না। এ নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বৈধ ও অবৈধ গ্যাস সংযোগধারীদে মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে।
কোনো কোনো এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্মকর্তারা অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও এ সংক্রান্ত কোনো মামলা না হওয়ায় দ্বিগুন উৎসাহে সংযোগ দেয় অসাধু ঠিকাদাররা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ট্রান্সমিশন জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক রতন চন্দ্র দে শিল্পাঞ্চলে গ্যাসের তীব্র সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, শীঘ্রই শিল্প এলাকার সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা পর্যন্ত এ অবস্থার উন্নতি হবে না বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৪