ঢাকা: দেশের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প ‘মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমির সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে। ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দাতা সংস্থা জাইকা।
তবে বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ পেতে চায় বলে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, মাতারবাড়িতে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। অধিগ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয়কে। তারা জমি অধিগ্রহণ করে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডকে (সিপিজিসিএল) হস্তান্তর করবে।
প্রাথমিকভাবে এক হাজার একশ ৭৩ দশমিক ৭৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। তবে জমির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। মাস্টার প্ল্যানে দেড় হাজার একর জমির কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নে এই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রথম দফায় ৩৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ছাড় করা হয়েছে।
সিপিজিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাসেম বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুতই এগিয়ে চলছে, জমি অধিগ্রহণের কাজ।
৬০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এতে জাইকা ঋণ হিসেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ দেবে। আর রাজস্ব খাত থেকে চার হাজার ৯২৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ও দুই হাজার ১১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে সিপিজিসিএল।
দাতা সংস্থা জাইকা ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রকল্পটি এগিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, একাধিক দফায়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্প্রদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এই প্রকল্পটিকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছি। এ বিষয়ে নিয়মিত ফলোআপ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জাইকাকে আরো দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০১৬ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর পরামর্শক নিয়োগ এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা আশা করছি নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে।
নসরুল হামিদ বলেন, মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হাব তৈরি হবে। সেখানে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানি বিনিয়োগে আগ্রহী। আমাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া কোরিয়ান একটি কোম্পানি বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহী।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি শনিবার কোম্পানিটির প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের একটি টিম শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসবে। তারপরই চূড়ান্ত হবে বিষয়টি।
তিনি বলেন, ঢাকার মতো ঘিঞ্জি নগরী নয়, পরিকল্পিত, পরিচ্ছন্ন ও পর্যটন নগরী গড়ে তোলা হবে। সেখানে আধুনিক জীবনের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি হচ্ছে।
চলতি মাসেই জাইকা মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ শুরু করবে। আর প্ল্যান তৈরিতে কাজ শুরুর দিন থেকে ৬ মাসের মতো সময় লাগতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বাধুনিক কোল টার্মিনাল হবে মহেশখালীতে। কয়লা খালাসে বন্দর নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনাল, রেল যোগাযোগ, পাঁচ তারকা হোটেল, বিমানবন্দর ও টাউনশিপ গড়ে তোলা হবে।
মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের হাব তৈরি করতে চায় সরকার। সেখানে থাকবে একাধিক মেগা পাওয়ার প্ল্যান্ট। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে উৎপাদন করা হবে; যার বড় অংশটি থাকছে এই অঞ্চলে।
বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব তাপস কুমার রায় জানান, ঢাকা একসময় এরকম ছিল না। ঠিক তেমনি মহেশখালী একসময় এই রকম থাকবে না। ঢাকার মতো যেন অপরিকল্পিত নগরী না হয়ম সে বিষয়ে এখন থেকেই সজাগ রয়েছে সরকার; যে কারণে পুরো কক্সবাজার জেলাকে নিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৪