ঢাকা: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। এ জন্য খুলনার লবণচরা প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
বাংলানিউজকে ইয়াফেস ওসমান জানান, প্রস্তাবিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে চীন সরকার সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। চীন সরকার এতে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহযোগিতা করতে চায়।
তিনি জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় বেশি হলেও ১৫ বছরেই ব্যয় উঠে আসে। এরপর পুরোটাই মুনাফা। সে কারণে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে।
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন একটি দীর্ঘ মেয়াদী বিষয়, তাই রূপপুরের পাশাপাশি দ্বিতীয় পরমাণূ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইয়াফেস ওসমান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রাক সমীক্ষার কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সব বাধা দূর হয়ে গেছে। এখন শুধুই এগিয়ে যাওয়ার পালা। বাংলাদেশ একটি গৌরবময় অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে। ’
নতুন এই অধ্যায় রচনার জন্য নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও যোগ করেন ইয়াফেস ওসমান।
বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ৩২তম দেশ হিসেবে আত্ম প্রকাশ করবে। বাংলাদেশের আগে ৩১টি দেশ পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
সর্বোচ্চ পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বিশ্বের সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ১ লাখ ২ হাজার ১৩১ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে- যা দেশটির উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৯ শতাংশ।
এরপরই রয়েছে ফ্রান্স। পরিমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে হলেও দেশটির মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের তিন-চতুর্থাংশ (৭৪ শতাংশ) যোগান দিচ্ছে পরমাণু কেন্দ্র। দেশটি বর্তমানে ৬৩ হাজার ১৩০ মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
পরিমাণের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাপান। দেশটি বর্তমানে ৪৪ হাজার ২১৫ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। চতুর্থ স্থানে থাকা রাশিয়া ২৩ হাজার ৬৪৩ মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।
পঞ্চম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি ২০ হাজার ৭৩৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগান দিচ্ছে পরমাণু কেন্দ্র থেকে। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে কানাডা ১৪ হাজার ১৩৫ মেগাওয়াট, ইউক্রেন ১৩ হাজার ১০৭ মেগাওয়াট, চীন ১২ হাজার ৮৬ মেগাওয়াট, জার্মানী ১২ হাজার ৬৮ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত রয়েছে ১৫তম স্থানে। দেশটি ৪ হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। অন্যদিকে পাকিস্তান তার মোট উৎপাদনের ৫.৩ শতাংশ এর সমান ৭২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে পরমাণু থেকে।
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে গেলে উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ১৯ নম্বরে। আর দ্বিতীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি হলে স্থান পাবে ১৬ নম্বরে। যা প্রতিবেশী দেশ ভারতের একধাপ নিচে।
বাংলাদেশের রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ হাতে নেওয়া হয় ১৯৬২ সালে। তখন ২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। ১৯৬৪ সালে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল বোঝাই জাহাজ করাচীতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরই অন্ধকারে চলে যায় এর ভাগ্য।
বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে উদ্যোগী হয়। এতে হাত বাড়িয়ে দেয় রাশিয়া। সবচেয়ে জটিলতা ছিলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। রাশিয়া বর্জ্য তার দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য চুক্তি করেছে।
প্রকল্পটির প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ের কাজ চলছে। ২০১৬ সালের মধ্যে এসব জরিপের কাজ শেষ হবে। এরপর জরিপের প্রতিবেদনগুলোর উপর ভিত্তি করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নকশা তৈরি করা হবে।
২০১৭ সালে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে। বর্তমানে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটটি ২০২২ সালে উৎপাদনে আসবে। দ্বিতীয় ইউনিটটি ২০২৩ সালে উৎপাদনে যাবে বলে জানান ইয়াফেস ওসমান।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৪