ঢাকা: ত্রিপুরা থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ আসবে। প্রথম ধাপে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) আনোয়ার হোসেন।
রুট চূড়ান্ত করা হয়েছ বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কুমিল্লা জেলার কশবা এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে বিদ্যুৎ লাইনটি। এজন্য বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশ, ভারত অংশে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার লাইন নির্মাণ করবে।
ভারত অংশে প্রায় ২৪ কিলোমিটার লাইন স্থাপন করতে হবে। আর বাংলাদেশ অংশে থাকছে ২৭ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ভারত এই লাইনটি দিয়ে শুধু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। তাই হুইলিং চার্জ পাবে ভারত বলে জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেন।
আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হলেও অবকাঠামো তৈরি করা হবে অনেক বেশি। আপাতত ১৩২ কেভি লাইন টানা হবে। ভবিষ্যতে আরও বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে যাতে দ্রুত ৪০০ কেভি লাইন স্থাপন করা সম্ভব হয়। সেভাবেই অবকাঠামো তৈরি হবে।
তিনি বলেন, আমরা ভেড়ামারা দিয়ে প্রথমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আমদানি করেছি। এখন এক হাজারে উন্নীত হতে যাচ্ছে। যদি অবকাঠামো বেশি না থাকত তাহলে এখন তা সম্ভব হতো না। তাই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিদ্যুতের দর এখনও চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যকে যে দামে বিদুৎ দেওয়া হয় ওই দামেই প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে।
বর্তমানে ভেড়ামারা দিয়ে যে দরে বিদ্যুৎ আসছে তার চেয়ে দর কম হতে পারে বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ। কারণ হিসেবে সূত্র জানিয়েছে পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে। গ্যাস ভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন খরচ অনেক কম পড়ে। তাই বিদ্যুতের দামও কম হবে।
ত্রিপুরা রাজ্যে এতদিন বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকলেও গ্যাস ভিত্তিক ৭২৬ মেগাওয়াট পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের ফলে সেখানে এখন বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের সময় বাংলাদেশের নদীপথ ব্যবহার করে ভারি যন্ত্রপাতি আনা নেওয়া করা হয়।
তৎকালীণ ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে একাধিক সভায় পালাটানা থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি এমনও বলেছিলেন বাংলাদেশ যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাতে এখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার অধিকার রাখেন।
যদিও বিষয়টি রাজ্য সরকারের এখতিয়ারভুক্ত নয়। পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর নির্ভর করছে। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারও সায় দিয়েছে বলে জানা গেছে।
আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশ অংশ বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। সার্ভের কাজ চলছে শিগগিরই লাইন নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ভারতের বহরমপুর থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ভারত। ওই লাইন দিয়ে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
অন্যদিকে নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। নেপালে ৮৩ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে যৌথভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ-নেপাল সরকার।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে হলে ভারতের মাটি ব্যবহার করতে হবে বাংলাদেশকে। বিষয়টি নিয়ে ত্রি-পাক্ষিক বৈঠকে চূড়ান্ত করার পক্ষে মত দিয়েছে ভারত।
অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালনের করিডোর চেয়েছে। সম্ভাব্য রুট ধরা অরুনাচল-রাঙ্গিয়ারাওটা-বড়পুকুরিয়া(বাংলাদেশ)-বোরাকপুর। প্রাক-সমীক্ষা যাচাইয়ের কাজ চলছে। এরপরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৬১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৪