ঢাকা: ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’র অর্থে কয়লার ক্ষেত্রের অনুসন্ধান ও উন্নয়ন করা হবে। এ জন্য ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা’ সংশোধন করে ‘জ্বালানি উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা’ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ কয়লা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হবে বিষয়টি এমন নয়। মূলত তহবিলের নাম পরিবর্তন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
চলতি মাসে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় সকলেই মত দিয়েছেন। সেখানে আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনসহ(বিপিসি)সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, এখন এই তহবিলে গ্যাস কোম্পানিগুলো মুনাফার একটি অংশ জমা দিচ্ছে। নীতিমালা পরিবর্তন করে জ্বালানি উন্নয়ন তহবিল করা হলে এখানে কয়লা ক্ষেত্র থেকেও অর্থ জমা হবে। আর সেই অর্থে জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
সচিব জানান, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানো এবং আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিসমুহের উপর হতে দেশের জ্বালানি খাতের নির্ভরশীলতা কমাতে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ কোম্পানিসমুহ কর্তৃক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উৎপাদনের জন্য গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, গ্যাসের মজুদ কমিয়ে আসায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লাকে বিবেচনা করা হচ্ছে। এজন্য কয়লার অনুসন্ধান, আবিস্কৃত কয়লা ক্ষেত্রের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও উৎপাদন জরুরি। যে কারণে এই তহবিলের নাম পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা-২০১২ সংশোধনীর মাধ্যমে জ্বালানি উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো অর্থ সংকটের কারণে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। সে কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। পেট্রোবাংলা প্রস্তাব করেছিলো গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সংগৃহীত অর্থ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে ব্যয় করা হবে।
পেট্রোবাংলার এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গ্যাসের দাম(১১ দশমিক ২২ শতাংশ) বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবে বিইআরসি ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’ গঠনের নির্দেশ দেয়। এতে বলা হয় গ্যাসে যে দাম বাড়ানো হচ্ছে সেই বাড়তি টাকার পুরো অংশ গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন কাজে খরচ করতে হবে। অন্য কোন খাতে ব্যবহার করা যাবে না।
এই তহবিল খরচসহ পরিচালনার জন্য জ্বালানি বিভাগ থেকে একটি নীতিমালা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১২ গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এই তহবিলের অর্থায়নের বাস্তবায়িত প্রকল্পের বিপরীতে ব্যবহার বা বিনিয়োগ করা অর্থ প্রাথমিকভাবে অনুদান হিসাবে বিবেচিত হবে।
ওই সময়ে দেশীয় কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস্ কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস্ লিমিটেডকে (এসজিএফসিএল) মোট ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
প্রথমে কথা ছিলো এ্ই তহবিল থেকে অনুদান দেওয়া হবে। কিন্তু চূড়ান্ত নীতিমালা করা হলো তখন অনুদানের এই টাকা আর অনুদান থাকেনি। নীতিমালায় বলা হয়েছে, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে বিনিয়োগ করা অর্থ যে প্রকল্পে খরচ করা হবে তা লাভজনক হলে তা দুই শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ ফেরত দিতে হবে।
প্রথম তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড ধরে প্রকল্প শুরুর পর দশ বছরের মধ্যে ১৪ কিস্তিতে (৪র্থ থেকে ১০ম বছরের মধ্যে) শোধ করতে হবে।
তবে গ্যাস অনুসন্ধান কাজে খরচ করার পর উত্তোলনযোগ্য গ্যাস না পাওয়া গেলে বা প্রকল্প লাভজনক না হলে এই অর্থ আর ফেরত দিতে হবে না। এই তহবিলের টাকায় বাপেক্সে রিগ ক্রয়সহ বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরও অনেকগুলো চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৪