ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

চিঠির অপেক্ষায় নয় বছর..

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৫
চিঠির অপেক্ষায় নয় বছর.. ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: এক চিঠির অপেক্ষায় কেটে গেছে ৯টি বছর। এগিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী, নির্দেশ দিলেন চিঠি দেওয়ার জন্য।

কিন্তু তারপরও মেলেনি সেই চিঠির দেখা।

কোনো ব্যক্তিগত চিঠি নয়। চিঠিটির জন্য থমকে আছে রাষ্ট্রীয় একটি কোম্পানির কার্যক্রম। এর প্রেরক হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), আর প্রাপক নবগঠিত রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নর্থ-ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (নওজোপাডিকো)।

২০০৫ সালে গঠন করা হয় রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানিটি। ‘রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস’ নিবন্ধন পায় ওই বছরের ৩ আগস্ট। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলায় যেসব অঞ্চলে বিপিডিবি বিদ্যুৎ বিতরণ করছে সেগুলো নতুন এই কোম্পানির হাতে হস্তান্তর করার কথা।

রংপুর বিভাগের ৫৮ উপজেলায় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৮০ জন গ্রাহক রয়েছেন। আর রাজশাহী বিভাগের ৭২ জেলায় ৬ লাখ ১৬ হাজার ১৫০ জন গ্রাহক রয়েছেন। অন্যরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক।

নতুন এই কোম্পানি গঠনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতি-লুটপাটে নিমজ্জ বিপিডিবি’র ক্ষমতা হ্রাস করা। বর্তমানে এসব এলাকায় সিস্টেম লস দেখানো হচ্ছে প্রায় ১৭ শতাংশের মতো। যার বেশিরভাগেই অবৈধ সংযোগের কারণে।
 
কোম্পানি গঠন করার পর অফিস নেওয়া হয়। কোম্পানির বোর্ড গঠন এবং এমডি নিয়োগ দেওয়া হয় ২০০৫ সালেই। সেই এমডি বসে বসেই অবসরে গেছেন ২০১১ সালে। এরপর কাজ না থাকার কারণে আর এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

মিটিং আর দৌড়-ঝাপের মধ্যে কেটে গেছে, ৯টি বছর। পিডিবি’র পক্ষ থেকে বার বার আশ্বাস দিলেও চূড়ান্তভাবে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়নি। নানাভাবে কালক্ষেপন করা হচ্ছে।

২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে আবার তোড়-জোড় শরু হয়। এবারও থেমে যায় অদৃশ্য কারণে। ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন এ কোম্পানি দ্রুত কার্যকর করার জন্য নির্দেশ দেন তিনি।

এরপরও দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। পার হয়ে গেছে একটি বছর। কিন্তু বিপিডিবি এ বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছে না। বৈঠকে বসলেই তারা সিবিএ নেতাদের দোহাই দিচ্ছে। বলে আসছে, এ সম্পদ হস্তান্তরে সিবিএ বিরোধিতা করছে। যে কারণে এখনই হস্তান্তরের চিঠি দেওয়া যাচ্ছে না।

তবে ভেতরে ভেতরে অন্য ঘটনা রয়েছে বলে জানা গেছে। ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক অবৈধ সংযোগ রয়েছে। যা থেকে বিশাল অংকের অবৈধ আয় রয়েছে। যা সিবিএ নেতা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়। কিন্তু কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হলে তাদের সেই উপরি আয় বন্ধ হয়ে যতে পারে- এ শঙ্কায় তাদের এই পিছুটান।

নানা রকম আলোচনার পর গত ১ জানুয়ারি চুড়ান্ত দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু সেই জানুয়ারি পার হয়ে গেছে, চিঠির দেখা মেলেনি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয় ২২ জানুয়ারি।
 
ওই সভায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সভায় ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই নওজোপাডিকো’র কাছে সম্পদ হস্তান্তর করার জন্য নির্দেশ দেন তিনি।

এরপর গত ২৯ জানুয়ারি বসেছিল বোর্ড সভা। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন বিপিডিবি’র সদস্য (প্রশাসন) লোকমান হোসেন মিয়া। সভায় নওজোপাডিকো’র এমডিসহ জনবল নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বিপিডিবি’র এই কর্মকর্তা বলেন, এখনই নওজোপাডিকো কার্যকর করা সম্ভব নয়।

নওজোপাডিকো’র পরিচালক(অর্থ)মশফিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। এখন শুধু দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্য চিঠি দেবে বিপিডিবি।

সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর আমাদের হয়ে যাবে। আর স্টাফ যারা আছেন তারাও কোম্পানির অধীনে চলে আসবেন। কাউকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। কিন্তু সেই চিঠিটিই দিচ্ছে না বিপিডিবি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।