ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

কয়লার দরপতনে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫
কয়লার দরপতনে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ!

ঢাকা: কয়লার দরপতনে আনন্দিত বিদ্যুৎ বিভাগ। একে বাংলাদেশের জন্য বড় সুসংবাদ বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।



বাংলাদেশ এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। ঠিক সেই সময় বিশ্ববাজারে কয়লার দরপতন অব্যাহত রয়েছে।

ক্ষেত্র বিশেষে কয়লার দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছেন, আমদানিনির্ভর রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৫,৮০০ বিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) তাপমান কয়লা ব্যবহার করা হবে। ২০১৩ সালে এ মানের কয়লার দাম ছিল প্রতিটন ১২০ ডলার। সেই কয়লা এখন পাওয়া যাচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ ডলারে।

আগের দরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৬ থেকে ৭ টাকার মতো খরচ পড়ার কথা। কিন্তু, বর্তমান দরে কয়লা পাওয়া গেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়বে ৪ থেকে ৫ টাকার মতো।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিটে যদি ১ টাকা সাশ্রয় হয়, তাহলে এক বছরে সাশ্রয় হবে, আড়াই হাজার কোটি টাকার মতো। এ রকম প্রায় ১৪টি কেন্দ্রের সমান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অথবা প্রস্তাবনা পর্যায়ে রয়েছে।

তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় ব্যয় বেড়ে গেছে, কয়েকগুণ। দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না লোকসান। কোনো কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন প্রতি ইউনিট খরচ পড়ছে ৩২ টাকার মতো। সেখানে ৫ টাকায় বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা মুনাফা করতে সক্ষম হবে বিদ্যুৎ বিভাগ।

সূত্র আরো জানিয়েছেন, সরকারিভাবে ১৩টি বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অথবা প্রস্তাবনার পর্যায়ে রয়েছে। এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে, প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট।

অন্যদিকে, বেসরকারি মালিকানায় ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে, ৪ হাজার ২৫৪ মেগাওয়াট। সরকারি-বেসরকারি মিলে সাড়ে ১৯ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বছরে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন টন কয়লার প্রয়োজন হবে।

নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, চীন, জাপানসহ বেশ কয়েকটা দেশ কয়লার ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে। এতে আরো দরপতন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, মোজাম্বিকের ৫টি বৃহৎ তেল কোম্পানি কয়লা উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছে। শিগগিরই কোম্পানিগুলো কয়লা উৎপাদনে যাবে। এতেও কয়লার দরপতনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানান, ২০১৪ সালের অক্টোবরে চীনের সাংহাই শহরে কয়লার ব্যবহার বন্ধের জন্য আদেশ জারি করা হয়েছে। ওই আদেশে বলা হয়েছে, যে সব বয়লারে কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিকল্প জ্বালানিতে যেতে হবে। সাংহাই শহরে প্রায় ২ হাজার ৮শ বয়লার রয়েছে।

কয়লা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বের এক নম্বরে রয়েছে চীন। বিশ্বের ৪৯ শতাংশ কয়লাই পোড়ানো হয় চীনে। আর সারা বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মজুদ রয়েছে দেশটির হাতে। সে কারণে চীন কয়লার ব্যবহার কমিয়ে দিলে এর বাজার কমে যাওয়াই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পিডিবির মাস্টার প্ল্যানে, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়লা দিয়ে উৎপাদিত হবে, ২০ হাজার মেগাওয়াট। আর দেশীয় কয়লা দিয়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট ও আমদানি করা কয়লা দিয়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা কয়লা দিয়ে উৎপাদন করতে হলে বছরে প্রায় ২১ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করতে হবে।

বাংলাদেশ অষ্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সাউথ আফ্রিকা ও মোজাম্বিকের কয়লাকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছে। দেশের ভেতরে বিশাল মজুদ থাকলেও রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ কয়লা গ্যাসিফিকেশনের (মাটির নিচেই তরলীকৃত) মাধ্যমে উত্তোলনের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। সরকারি হিসাব মতে, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ি, জয়পুরহাটের দীঘিপাড়া, রংপুরের খালাশপীর এবং বগুড়ার কুচমায়সহ পাঁচটি কয়লা খনি আবিষ্কৃত হয়েছে।

এসব খনিতে মজুদ রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩শ মিলিয়ন টন উন্নতমানের কয়লা। এর মধ্যে শুধুমাত্র বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।