ঢাকা: গরীব মানুষের জন্য জ্বালানি নীতি গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই- ইলাহি চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ র্শীষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন,আমাদের জ্বালানি নীতিতে কৃষক নিম্নবিত্ত ও গরীব মানুষের কথা চিন্তা করা হবে। তাদের সুবিধা নিশ্চিত করা আমাদের কাজ।
তিনি আরও বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন। এখন থেকে যতোগুলো সরকারি ভবন তৈরি হবে সেখানে সৌরবিদ্যুৎ ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা থাকবে। দক্ষ জনশক্তির অভাবে জ্বালানি ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন,বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার।
বাংলাদেশের মাটি, পানি, সমুদ্র, বন, বালি ও মাটির নীচের সকল প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বাংলাদেশের জনগণের শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্বালানি নিরাপত্তা, শিল্পায়ন, বিদ্যুৎ, কৃষি উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং সর্বোপরি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই খনিজ সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা সদা জাগ্রত থাকবো।
ঢাকা-স্কুল অব ইকোনমিস ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যেন সৈয়দ ইউসুফ হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. মো. হোসাইন মনসুর। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম মোয়াজ্জেম হোসেন খান।
সৈয়দ ইউসুফ হোসেন বলেন, গ্যাস সংকটে আর বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে নগরবাসীর কষ্ট করছে।
জ্বালানির ক্রমাগত চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের পর এবার গ্যাস রেশনিং করেও শেষরক্ষা হয়নি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের। তাই সরকার বিনামূল্যে সারাদেশে এনার্জি সেভিং ল্যাম্প দিয়েছে। আমরা এর সুফল পেয়েছি।
তিনি বলেন,বাংলাদেশে প্রচুর গ্যাস ও কয়লা সম্পদ আছে
জনগণের বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য অনেক পথ আছে যা দিয়ে নিশ্চিতভাবে সুলভে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। আমরা এর আগেও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের কথা বলেছি।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সরকার জ্বালানি সংকট মেটাতে কাজ করছে।
বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে পেট্রোলিয়ামপ্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে। বাপেক্স এর অনুসন্ধানলব্ধ জ্ঞানের উপরই প্রধানত বিদেশি কোম্পানীগুলো কাজ করছে।
দেশে বর্তমানে মোট ২৩টি গ্যাসফিল্ড আছে। এর মধ্যে ১৭টি চালু আছে। গ্যাস রিজার্ভ আছে ২০.৬৩ টিসিএফ। দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো জাতীয় কর্তৃত্বে উন্নয়ন ও উৎপাদনে গেলে গ্যাস ও বিদ্যুৎসংকট থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়া সম্ভব হবে।
বর্তমানে ৩৯% পাওয়ার সেক্টরে, সিএনজি ৫%, চা শিল্পে ১%, শিল্পকারখানায় ১৭%, রাসায়নিক সার ১০%, গৃহস্থালি কাজে ১২% আর ১৬% উদ্বৃত্ত থাকে।
‘জ্বালানি সংকট জ্বালানী নিরাপত্তা’ একটা শব্দবন্ধ (টার্ম) জনপ্রিয় হচ্ছে দিন দিন। যন্ত্রযুগ টিকিয়ে রাখবার জন্য জ্বালানির বিকল্প নেই। আমাদের শক্তির উৎসগুলো সীমিত।
আমরা যে শক্তিটা অপচয় করি সেটা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে ফেলছে। পৃথিবী জুড়ে প্রাক্বতিক বিপর্যয় কিংবা পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে। কোথাও পৃথিবী অধিকতর উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কোথাও পৃথিবী খরায় ভুগছে। পৃথিবীর দুই শীর্ষ বিন্দুতে জমে থাকা বরফ গলছে। এবং সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতা বাড়ছে।
উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি হওয়ায়ই এ সংকট দেখা দিচ্ছে।
আলোচক ড. এম মোয়াজেম হোসেন খান বলেন, উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি সংকটের আশংকা রয়েছে। দেশের শস্যভা-ার বলে খ্যাত উত্তরাঞ্চলের জ্বালানি সংকট দেখা দেয়ারও আশংকা করা হচ্ছে। নাব্যতা সংকটের কারণে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর। পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি সংকট দেখা দেওয়ারও আশংকা রয়েছে।
যমুনা নদীর মোহনগঞ্জ, পেঁচাকোলা, নাকালিয়া, হরিরামপুর, মাছখালী, রাকসা ও নগরবাড়ি পয়েন্টে ড্রেজিংয়ের জন্য বিপিসি বিআইডবি¬উটিএ’র কাছে তাগিদ দিয়ে একাধিকবার চিঠি দেয়। কিন্তু সংকট উত্তরণে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একটি ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত ড্রেজিং করায় নাব্যতা বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি এ ব্যপারে দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১১