ঢাকা: টিআইবির প্রতিবেদন তথ্য ভিত্তিক নয় বলে মন্তব্য করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। রামপাল ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে গত ১৬ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানায় মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় তার বিবৃতিতে বলেছেন, প্রতিবেদন প্রণয়নে সরকারের সার্বিক কার্যক্রম ও প্রকৃত তথ্যাদি প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়নি। ফলে জনমনে প্রকল্প ২টি সম্পর্কে বিরূপ ধারনা সৃষ্টি হতে পারে।
টিআইবি’র প্রতিবেদনের ওপর বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে বিধায় সার্বিক বিষয়টির উপর বিদ্যুৎ বিভাগের বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, বিগত ৬ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুনের ও বেশি বেড়েছে। ফলে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনসংখ্যা ৪৭ ভাগ থেকে উন্নীত হয়ে বর্তমানে ৭০ ভাগে তা উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলায় সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ বাস্তবায়ন করছে।
গ্যাসের মজুদের পরিমাণ ক্রমন্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে- এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিশ্বের অন্যান্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের ন্যায় বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমদানি নির্ভর কয়লা ভিত্তিক এসব প্রকল্পের স্থান নির্ধারণে কয়লা পরিবহন, সবচেয়ে কম জমির পরিমাণ এবং সর্বোপরী পরিবেশগত বিষয়সমূহকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এ সব বিবেচনায় সরকার কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রাক সমীক্ষা যাচাইয়ের মাধ্যমে দেশের উপকূলবর্তী ২টি স্থান বাগেরহাট জেলার রামপালে এবং কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ীতে নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখিত ২টি স্থান চূড়ান্তকরণের পূর্বে বিভিন্ন পর্যায়ে গণশুনানীসহ উক্ত প্রকল্প এলাকার জনগণের সাথে উম্মুক্ত মতবিনিময় করা হয়। তাছাড়াও বিগত ২-৩ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকল্প ২টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়।
বিবৃতি:
প্রকল্প ২টি সম্পর্কে জনগণকে সঠিক ধারনা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিবেদনে উল্লেখিত কিছ তথ্য ও মন্তব্যের ওপর বিদ্যুৎ বিভাগের মতামত নিম্নরুপ:
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র: ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রাক সমীক্ষার মাধ্যমে খুলনা বিভাগের ৩টি সম্ভাব্য স্থান হতে রামপালকে সর্বোত্তম উপযোগী স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুন্দরবন সীমানা হতে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
প্রকল্প এলাকা হতে মাত্র ১৫০ পরিবারকে পূণর্বাসনের প্রয়োজন হয়। প্রকল্প এলাকায় অধিকাংশ জমিই অকৃষি জমি। প্রকল্প এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাথমিক ছাড়পত্র পাওয়ার পরই মাটি ভরাটসহ অন্যান্য উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পশুর নদী হতে রিসাইকেল পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহার করা হবে যা পশুর নদীর গড় প্রবাহের ০.০৬ ভাগ। উত্তোলিত পানি রিসাইকেল করার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের বিধিবদ্ধ তাপমাত্রা সীমার মধ্যে পূনরায় পশুর নদীতে ছাড়া হবে।
মাতারবাড়ী প্রকল্প:
জাইকার Overseas Development Assistance (ODA) ফান্ড এর আর্থিক সহায়তায় মাতারবাড়ীতে বিদ্যৎ কেন্দ্রসহ, বন্দর, কোল টার্মিনাল ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জাপান সরকারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্প এলাকায় মাত্র ১৬টি পরিবারকে পুর্নবাসন করা হয় এবং বেশিরভাগ জমি অকৃষি জমি।
পরিশেষে, সচেতন নাগরিক সমাজের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় গৃহীত প্রকল্পসমূহ জনকল্যানে, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সকল নাগরিকের জন্য সাশ্রয়ীমূল্যে মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতকল্পে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আশা করা যাচ্ছে যে, এই বিস্তারিত আলোকপাতের মাধ্যমে জনমনে সষ্ট বিভ্রান্তি দূর হবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে টিআইবি কর্তৃক কোনো প্রতিবেদন বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনাক্রমে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে প্রণয়নের জন্য অনুরোধ জানানো হলো। এতে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে এবং টিআইবি’র ও ভাবমুর্তি উজ্জ্বল হবে বলে সরকার প্রত্যাশা করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৫
বিএস