ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

গালভরা সোলার প্যানেল, তবু সড়কবাতি জ্বলে না!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও শেখ জাহাঙ্গীর আলম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৫
গালভরা সোলার প্যানেল, তবু সড়কবাতি জ্বলে না!

ঢাকা: কথা ছিল সূর্যের রশ্মি ও তাপ শুষে নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে সোলার প্যানেল। আর সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র জ্বলে উঠবে সড়কবাতি।

এজন্য কয়েক কোটি টাকাও ঢালা হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সড়কবাতি আর জ্বলে না, কিছু বাতি জ্বললেও তা জ্বলে কেবল মিটমিট করে।

খোদ রাজধানীর ভিআইপি সড়কের এই অবস্থা। সিটি হাট সেন্টারের সামনের পানবিক্রেতা বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আগেই তো ভালো ছিল। সোডিয়াম লাইটে রাস্তা ঝলমল করতো। এখন তো কিছুই দেখা যায় না। রাস্তা অন্ধকার হয়ে থাকে।
 
পলওয়েল মার্কেট (পল্টন থানা সংলগ্ন)সামনে চাবিক্রেতা আরমান হোসেন হাত দেখিয়ে বলেন, ওই যে দেখছেন খাম্বাটিতে লাইট (বাতি) শোভা পাচ্ছে। কিন্তু লাইটগুলো জ্বলে না। আগে সামান্য আলো জ্বললেও এখন সেটাও আর নেই। মার্কেট খোলা থাকলে দোকানের আলোতে কিছুটা রক্ষা। কিন্তু রাতে মার্কেট বন্ধ হয়ে গেলে এই সড়কটি ‘ভূতের গলি’তে রূপ নেয়। চলাচল করতে গা ছম ছম করে।
 
নির্মাণকালে প্রতিটি বাতির ওয়ারেন্টি ধরা হয় ২০ বছর। এ সময়ে বাল্ব নষ্ট হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পুনর্স্থাপন করে দেবার কথা। আর সোলার প্যানেলের ক্ষেত্রে ৫ বছর ও ব্যাটারির ৩ বছরের গ্যারান্টি থাকলেও সবই ‘‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’’ অবস্থা। কিন্তু নষ্ট বাল্ব কে যে বদলে দেবে সেরকম কাউকে খুঁজে পাচ্ছেন না এলাকার মানুষ। না ডিসিসি না, ঠিকাদার---কেউ আর সড়কবাতির খোঁজ নেয় না।
 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) বাংলানিউজকে জানান, পাইলট প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে এই রাস্তায় সোলার প্যানেল বসানো হয়। প্রথমবার করার কারণে কিছুটা ভুলত্রুটি থাকতেই পারে।
 
রাস্তা অন্ধকার থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সোডিয়াম বাল্বগুলো ছিলো ৯৫ ওয়াটের। আর সোলার প্যানেলের বাল্ব লাগানো হয়েছে ৭৫ ওয়াটের। সে কারণে আলোর স্বল্পতা রয়েছে। ভবিষ্যতে রাস্তায় সোলার প্যানেল বসানোর সময় এসব ত্রুটি শুধরে নেওয়া হবে।
 
‘‘সোলার প্যানেল স্থাপন কিছুটা সফল কিছুটা ব্যর্থ’’ বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
 
কাকরাইলে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে থেকে ফকিরাপুল হয়ে মতিঝিল নটরডেম কলেজ পর্যন্ত মোট ১২২ খুঁটিসহ বাতি স্থাপন করা হয়। প্রতি খুঁটিতে ২টি বাতি। ২০১১ সালের প্রথম থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পব্যয় হয় প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ টাকা।
 
খুঁটির উপর দক্ষিণমুখি করে বসানো হয় সোলার প্যানেল। আর চার্জ ধরে রাখার জন্য চার্জ কন্ট্রোলার ও ব্যাটারি সংযুক্ত করা হয়। বাতিগুলোর পরিচালনার জন্য ইনভার্টার ও সুইচিং সিস্টেমের কন্ট্রোলার বসানো হয়।
 
পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপিত  বাতিটির খুঁটি, ব্যাটারি, কন্ট্রোলার, ইনভার্টার ও প্রতিটি বাতি স্থাপন বাবদ সর্বমোট ব্যয় হযেছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অন্যদিকে সোডিয়াম লাইটের ক্ষেত্রে খুঁটিসহ স্থাপনে ব্যয় হয় প্রায় ১ লাখ টাকা।  
 
প্রতিটি খাম্বায় ৮০ হাজার টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে। তবু সেই সোলার প্যানেলেও আর স্বস্তি মিলছে না। সেবার মান এতোই শোচনীয় যে, আলোর বদলে সড়কজুড়ে আধো আলো আর আধো অন্ধকার বিরাজ করে রাতে। শুষ্ক মৌসুমে সোলার প্যানেল কিছুটা আলো ছড়ালেও বর্ষাকালে তা আর কোনো কাজেই লাগে না। আলোর বদলে তখন অন্ধকারেরই রাজত্ব।
প্রতিটি সোলার প্যানেলে সূর্য থেকে কমপক্ষে ৩ দিন চলার মতো শক্তি সংরক্ষণ করে রাখার কথা। কিন্তু বর্ষায় কয়েক দিন একাধারে বৃষ্টি থাকলে বাতিগুলো একেবারেই জ্বলে না।
 
ঢাকা সিটি করপোরেশন এই একটি মাত্র সড়কে সৌরবাতি স্থাপন করেছে। এর বাইরে ট্রাফিক সিগন্যাল লাইটে বিদ্যু‍ৎ সরবরাহের জন্য ৬২টি সংযোগ সড়কে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৩ কোটি টাকা। আরও ৩২টি সড়ক সংযোগে সোলার প্যানেল বসানো পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
 
ঢাকা সিটি করপোরেশনের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পিডি মো: সেহাব উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, মুলত বিদ্যুৎ না থাকলে এই সৌর বিদ্যু‍ৎ দিয়ে সিগন্যাল লাইট জ্বালানোর জন্য এই সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ থাকলেও সাশ্রয় করার জন্য কখনও কখনও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে।
 
এই কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে প্রায় আড়াই শতাধিক সংযোগ সড়ক রয়েছে। যেগুলোতে পর্যায়ক্রমে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সিগন্যাল লাইট জ্বালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
 
অন্যদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) নতুন করে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনে ২০ কিলোমিটার সড়কে সোলার প্যানেল বসানোর প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
 
বিপিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মো: সারোয়ার হোসাইন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সোলার স্ট্রিট লাইট প্রজেক্ট নামে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ২০০ কিলোমিটার সড়কে এলইডি লাইট ও ২০ কিলোমিটার সড়কে সোলার প্যানেল বসানো হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৬ কোটি টাকা। এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রকল্পটি ‍বাস্তবায়ন করা হবে।
 
এজন্য ৮টি প্যাকেজে টেন্ডার করা হয়েছে। ১৩ মে দরপত্র জমা গ্রহণ করা হয়েছে। চলছে দরপত্র মূল্যায়নের কাজ। কোন সিটি করপোরেশনে কত কিলোমিটারে বা কোন কোন রাস্তায় সোলার প্যানেল বসানো হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি সারোয়ার হোসাইন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ জুন ১২, ২০১৫
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।