ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ কতদূর

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ কতদূর ফাইল ফটো

ঢাকা: সম্ভব হলে ফিল্ডে গিয়ে আবেদন নিয়ে তৎক্ষণাত বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আসতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন ঝুলিয়ে রাখা যাবে না- এমন নির্দেশনা জারি করেছিলেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মঈন উদ্দিন।

রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিমাসে প্রায় দেড় লাখের মতো নতুন সংযোগ প্রদান করছে।

আরইবি চেয়ারম্যানের ওই ঘোষণায় একদিকে যেমন সংযোগ প্রদানের গতি বেড়েছে একই সঙ্গে ক্ষেত্র বিশেষে উৎকোচ গ্রহণের পথও হয়েছে বন্ধ। এ নির্দেশনার আগে ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড, লাইন ওভার লোডেড এমন সব অজুহাতে সংযোগ প্রদানে বিলম্ব করতেন একশ্রেণির কর্মকর্তারা। বিদ্যুৎ সংযোগ প্রত্যাশীরাও ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে ঘুষ দেওয়ার পথই বেছে নিতেন। ওই সুযোগে এক শ্রেণির কর্মকর্তারা গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে সরকারের এই সিদ্ধান্তে।

নতুন এই নির্দেশনায় কিছুটা ‍ঝুঁকি থাকলেও উৎকোচ বন্ধ করার জন্য এই পন্থা বেছে নিয়েছেন বলে আরইবির কর্তারা দাবি করেছেন। নির্দেশনার পর  বেশি কিছু এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে আবেদন নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

নতুন এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সংযোগে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে ২০২১ সালে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা ছিল। কিন্তু ৫৪ হাজার ৭টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা আরইবি ২০১৮ সালের মধ্যেই সবার ঘরে বিদ্যুৎ দিতে চায়। সংস্থাটির প্রধান বলেন, ২০১৮ সালে শুধু কিছু দুর্গম এলাকা (পাহাড়ি ও উপকূলীয় এলাকায়) অবশিষ্ট থাকবে।

আরইবি চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের মধ্যেই সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জনগণকে অনুরোধ করব, তারা যেন কাউকে ঘুষ না দেন। আর কিছুটা সময় অপেক্ষা করলে বিদ্যুৎ আপনাদের ঘরে গিয়ে ধর্না দেবে।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে, তখন ৪৭ শতাংশ জনগণকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। আর এখন প্রায় ৭২ শতাংশ লোক বিদ্যুতের আওতায় এসেছে বলে দাবি করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইস্তেহারে যে ঘোষণা দিয়েছিলো, সেই লক্ষ্যমাত্রা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। আমরা গলাবাজিতে নই, কাজে বিশ্বাসী। সে কথা আবারও প্রমাণ করেছি। ’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনী ইস্তেহার ‘ভিশন-২০২১’ এ ২০১৩ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াট, আর ২০১৫ সালের মধ্যে ৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার ঘোষণা ছিল। সেখানে ২০১৩ সালে ৭ হাজারের স্থলে ১০ হাজার মেগাওয়াট আর বর্তমানে সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে।

এতসব অর্জনের পরেও লোডশেডিং পিছু ছাড়ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে আগে বলা হতো, লোডশেডিং নয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি এ অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, বিতরণ ব্যবস্থার ক্রুটির কারণে জটিলতা হচ্ছে। পাশাপাশি কিছুটা লোডশেডিং রয়েছে।

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
 
বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ভারতের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে রামপালে কয়লা ভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চীনের সঙ্গে পটুয়াখালীতে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে মাতাবাড়িতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়িতে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মোট ৮টি বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়া বেশ জোরেশোরেই চলছে।

ভারতের রিলায়েন্স আদানি গ্রুপসহ অনেক দেশের খ্যাতনামা কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাবনা দিয়েছে। যে কারণে এই খাতে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে বলে মনে করে বিদ্যুৎ বিভাগ। অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে সরকার। আগে যেখানে ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিদেশি ঋণের জন্য পথ চেয়ে থাকতে হতো, এখন সেখানে বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো।

বিবিয়ানা (দক্ষিণ) ৩৮৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩২২ মিলিয়ন ডলার।   যা কয়েক বছর আগে স্বপ্নের মতো মনে হতো।

২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ৭৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি করেছে। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ১২৬ মেগাওয়াট। এরমধ্যে উৎপাদনে এসেছে ৬৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যা থেকে ৬ হাজার ৩২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। আর অন্যগুলো নির্মাণাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুতের গ্রাহকের সংখ্যা ছিলো ১ কোটি ৮ লাখ। বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে ২০০৯ সালে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর জুন মাসে ৩৭১ কিলোওয়াট ঘণ্টায় পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
এসআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।