ঢাকা: তিন থেকে চার বছরের মধ্যে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধ্যাপক ড. ম তামিম।
রোববার (২৩ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পাক্ষিক ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’র আয়োজনে ‘জ্বালানি চ্যালেঞ্জেস-২০৩০’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, গ্যাস থাকলেও কূপের চাপ কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমে যাবে। দেশে বর্তমানে প্রমাণিত ও সম্ভাব্য মিলে ১৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে। আর বছরে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর সমালোচনা করে ম. তামিম বলেন, বিদ্যুতে গ্যাসের বিকল্প রয়েছে। সেখানে কয়লা ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে শিল্পে গ্যাসের বিকল্প নেই। সেখানে সরবরাহ বাড়ানো উচিত। তাতে কর্মসংস্থান বড়বে।
গাড়িতে সিএনজি ব্যবহারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বলা হয় পেট্রোল-অকটেন বড়লোকের জ্বালানি। কিন্তু বেশিরভাগ প্রাইভেট গাড়ি সিএনজি দিয়ে চলছে। এলএনজি, সিএনজি, পেট্রোল-অকটেনের দামে সমন্বয় প্রয়োজন। না হলে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গাড়ির লাইন দীর্ঘ হতেই থাকবে।
সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার সমালোচনা করে ম. তামিম বলেন, ২০৩০ সালে গ্যাস দিয়ে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। ততোদিনে তো গ্যাসেই থাকার কথা নয়!
জবাবে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ভবিষ্যতে গ্যাসের বিকল্প হবে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস)। এজন্য মহেশখালী ও খুলনায় দুইটি এলএনজি টার্মিনাল করা হচ্ছে।
‘আবাসিকে ১২ শতাংশ, সিএনজিতে ৬ শতাংশ এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৭ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ক্যাপটিভ বন্ধ করে দেওয়া হবে। সিএনজির বদলে এলএনজি দেওয়া হবে গাড়িতে। আর আবাসিকে এলপিজি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে,’ উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, অনেকেই বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করার কথা বলেন। কিন্তু স্ট্রাকচার সমন্বয় না হলে শুধু দামের সমন্বয় করা জটিল।
তার দাবি, আগে অনেক বিতরণ কোম্পানি লোকসানে ছিল। এখন ক্রস সাবসিডি দেওয়ায় সবগুলোই লোকসান থেকে বেরিয়ে এসেছে। শুধু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড লোকসানে রয়েছে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায়। প্রাথমিক জ্বালানি দাম কমাতে পারলেই সংকট কেটে যাবে।
দুঃখ প্রকাশ করে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিইআরসি অনেক ভালো কাজ করেছে। কিন্তু বিদ্যুতের দাম বাড়লেই জনগণ বিইআরসির দোষ দেয়। কখনই চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুতের দাম বাড়ায়নি বিইআরসি। তাই বিতরণ কোম্পানির লোকজনও বেজার থাকে।
‘বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও গ্যাস উন্নয়ন নামে দু’টি তহবিল গঠন করা হয়েছে। যা থেকে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল থেকে বিবিয়ানায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে বিপিডিবি। এগুলো বিইআরসির উদ্যোগের সুফল,’ বলেন তিনি।
বুয়েট-এর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, যেখানে মাত্র আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিতরণ করতে পারছে না বিতরণ কোম্পানিগুলো, তারা কীভাবে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিতরণ করবে? আমার তা বোধগম্য হয় না।
তিনি বলেন, বিতরণ ব্যবস্থায় অনেক গড়বড় আছে। হয়তো উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হচ্ছে। এই বিদ্যুতের বাজার কোথায়? শিল্পের চাহিদা কতো, আর ২০৩০ সালে শিল্পের চাহিদা কতো হবে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও মানবসম্পদ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সরকার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে নজর দিয়েছে। পাশাপাশি বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সংশয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
জবাবে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, মানবসম্পদ বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সরকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পরীক্ষায় অতীতে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। এবারও হবে।
অনুষ্ঠানে ‘অ্যানার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’র কন্ট্রিবিউটিং এডিটর ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আবদুস সালেক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. মুশফিকুর রহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৫, আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা
এসআই/এইচএ/এমএ