ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

আদালতে গড়ালো বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যু

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
আদালতে গড়ালো বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যু

ঢাকা: অবশেষে আদালতে উঠছে বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি ইস্যু। গত বুধবার (১৪ অক্টোবর) বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে রিট দায়ের করে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দ’র বেঞ্চে শুনানির জন্য এই মামলা উত্থাপন করা হবে।

ক্যাবের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে থাকছেন অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, অ্যাড. ওয়াজিউল্লাহ ও সাইফুল ইসলাম।
 
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, গত ২৭ আগস্ট বিদ্যুতের দাম গড়ে ২.৯৩ এবং গ্যাসের দাম ২৬.২৯ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিইআরসি। যা ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক ও বে-আইনি বলে দাবি করে আসছে ক্যাব।
 
ক্যাব উপদেষ্টা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আইনে বলা হয়েছে, দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর গণশুনানির ৯০ দিনের মধ্যে আদেশ দিতে হবে। কিন্তু ২৭ আগস্ট যে আদেশ দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে বিদ্যুৎ গণশুনানি হয়েছে জানুয়ারিতে, আর গ্যাসের গণশুনানি হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে।
 
সে হিসেবে ১৮০ দিন পর আদেশ দিয়েছে বিইআরসি। এ আদেশ আইনগতভাবে সঠিক হয়নি। যে কারণে ক্যাব প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে। প্রথমে বিইআরসির কাছে আবেদন করেছিলাম। সেখান থেকে কোন সাড়া পাইনি, যে কারণে কোর্টে রির্ট দায়ের করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক শামসুল আলম।
 
শামসুল আলম বলেন, ২০০৩ সালে গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণের ফর্মুলা দিয়েছে সরকার। তাতে বলা হয়েছে, গ্যাসের ক্রয়/উৎপাদন মূল্য+ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয়+ সম্পূরক শুল্ক+মুল্য সংযোজন কর= ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য হবে। এ ফর্মুলা বলবত রয়েছে।

গ্যাসের ক্রয়/উৎপাদন মূল্য, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয়, সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর বাড়েনি বা বাড়ানোর প্রস্তাবনা নেই সরকারের। সে কারণে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আইনগত ভিত্তি নেই। আইনগতভাবে এ প্রস্তাব গণশুনানির জন্যও অনুপযুক্ত ছিল বলে মন্তব্য করেন শামসুল আলম।
 
ক্যাবের এই উপদেষ্টা বলেন, গণশুনানিতে দেখা গেছে, গ্যাসের বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রায় সবগুলোই মুনাফা করছে। কোন কোন কোম্পানি স্টাফ ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রফিট বোনাস পেয়েছে। এ কথা কোম্পানিগুলো স্বীকার করেছে। তারপরও কেন দাম বাড়ানো হবে। দাম বৃদ্ধির ফলে তাদের মুনাফাই বাড়বে শুধু।
 
১০ সেপ্টেম্বর বিইআরসি বরাবরে দেওয়া এক চিঠিতে এ দাম প্রত্যাহারের দাবিতে আল্টিমেটাম দেয় ক্যাব। এতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বর্ধিত মূল্য ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। অন্যথায়  উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দেয় ভোক্তাদের এই সংগঠনটি।
 
ক্যাবের ওই আলটিমেটাম আমলে না নেওয়ায় রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটের ফলে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বর্ধিত মূল্য আইনগতভাবে টিকবে না বলেও আশা প্রকাশ করেছে ক্যাব।
 
গত ২১ জানুয়ারি থেকে চার দিনব্যাপী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির উপর গণশুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। এতে বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রস্তাবিত পাইকারি দাম ১৮.১২ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বিবেচনায় ১৭ থেকে ২৫.৮৯ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলো। দু’টি বিতরণ সংস্থার সামান্য বৃদ্ধির সুপারিশ থাকলেও অন্যদের প্রস্তাব নাকচ করে  দেয় বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

পাইকারি দাম বাড়লে (প্রস্তাবিত ৫.১৬ শতাংশ) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) ৭.৮৩ শতাংশ এবং ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ২.২৮ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে বিইআরসি। অন্যান্য কোম্পানির দাম বাড়ানোর প্রয়োজন নেই বলে মত দেয় কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।