আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম অর্ধে ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সময় অন্যান্য চুক্তির সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তিটিও স্বাক্ষর হবে বলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
রাশিয়ার অর্থায়ন, তত্ত্বাবধান ও সার্বিক সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি অথবা শেষ দিকে এই প্রকল্পের মূল কাজ বা কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে ভারতের সঙ্গে এই পরামর্শক সেবা চুক্তি ও রাশিয়ার সঙ্গে বর্জ্য(স্পেন্ট ফুয়েল) নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা যয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে চুক্তিটি হতে যাচ্ছে সেটি পরামর্শ বা উপদেশ সংক্রান্ত একটি চুক্তি। এরই মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে এই চুক্তির প্রস্তাব সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের সময় চুক্তিটি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি হিসেবেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়লয়ের পক্ষ থেকে সব কিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরের সময়ই চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে বলে বিজ্ঞান্ ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়।
সূত্রগুলো আরও জানায়, এই চুক্তিটির অধীনে ভারতের কাছ থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ সেবা নেওয়া যাবে। চুক্তিটি অনুযায়ী ভারত রূপপুর প্রকল্পে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতে পারবে। তবে সেটা বাংলাদেশের প্রয়োজন অনুযায়ী। কোনো বিষয়ে বাংলাদেশ মনে করলে বা প্রয়োজন হলে ভারতের থেকে পরামর্শ বা উপদেশ নেবে। ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার অভিজ্ঞা রয়েছে। আর ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও রাশিয়ার প্রযুক্তি ও তত্ত্বাবধানেই করা হয়েছে। এ কারণেই ভারতের সঙ্গে চুক্তিটি করা হচ্ছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বংলানিউজকে বলেন, ‘চুক্তির প্রস্তাবটি প্রস্তুত আছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় চুক্তিটি স্বাক্ষর হতে পারে। ’
আনোয়ার হোসেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখা শোনার দায়িত্বে রয়েছেন। ভারতের সঙ্গে হতে-যাওয়া এই চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা হবে এক ধরনের পরামর্শক সেবা চুক্তি। কোনো বিষয়ে প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কাছ থেকে পরামর্শ সেবা নিতে পারবো। ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিষয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর রাশিয়ার সঙ্গেই ভারত কাজ করছে। এজন্য ভারতের সঙ্গে আমরা এ চুক্তিটি করতে যাচ্ছি। ’
এদিকে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য(স্পেন্ট ফুয়েল) রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত আলাদা আরও একটি চুক্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই চুক্তি সংক্রান্ত প্রস্তাবের খসড়া তৈরির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। রাশিয়াকে এই চুক্তিটির খসড়া তৈরি করে দেওয়ার কথা হয়েছে। সে অনুযায়ী রাশিয়া কাজ করছে বলে জানা গেছে। খসড়াটি তৈরি হলে উভয় পক্ষ্ সেটি নিয়ে আলোচনা সাক্ষেপে স্বাক্ষরের জন্য চূড়ান্ত করবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণায়লয়ের একটি সূত্র জানায়, এ চুক্তিটির প্রস্তাব তৈরি হয়েছে কি না সে ব্যাপারে রাশিয়া এখনও কিছু জানায়নি। তবে চলতি বছরের মাঝামাঝি বা বছরের শেষ দিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কাজের উদ্বোধনের প্রস্তুতি রয়েছে। এই সময় প্রকল্পের কংক্রিট ঢালাই দেওয়া শুরু হবে। এই মূল কাজের উদ্বোধন করার আগেই বর্জ্য রাশিয়াতে নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে বলে মন্ত্রণালয়ের ওই সূত্রটি জানায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭
এসকে /জেএম